ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

নাটোরে বছরে ৩ বার চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ

মো. মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৩
নাটোরে বছরে ৩ বার চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ

নাটোর: নাটোরের নলডাঙ্গায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে সফলতার মুখ দেখছেন ১৮০ জন কৃষক। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ করে ৮৬৪ মেট্রিক টন উৎপাদনের আশা করছেন কৃষি বিভাগ।

যার বর্তমান বাজার মূল্য ১ হাজার টাকা মণ হিসেবে মোট মূল্য ২ কোটি ১৬ লাখ টাকা।  

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি প্রণোদনার বীজ, সার ও আন্তঃপরিচর্যা বাবদ নগদ অর্থ সহায়তা পাওয়ায় কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন এসব পেঁয়াজ চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন। বিঘা প্রতি ১২০ মণ হারে ফলন ও বর্তমান বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা তাই বেশ খুশি।

নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে সূত্র জানায়, প্রতি বছর নলডাঙ্গা উপজেলায় প্রায় ২ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ হয়। এতে মোট পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ৫১ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন। আর ১ লাখ ৪২ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে বছরে পেঁয়াজের খাদ্য চাহিদা ১ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন। খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে বছরে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও স্থানীয় বাজারে বাজারজাত করা হয়। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ। ফলে পেঁয়াজ চাষাবাদসহ উৎপাদনের পরিধি আরও বেড়েছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।  

কৃষি বিভাগের মতে নলডাঙ্গা উপজেলায় শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন তিনবার মিলে মোট উৎপাদন হয় ৫৩ হাজার ৭২২ মেট্রিক টন। আর বছরে খাদ্য চাহিদা প্রায় ২ হাজার  মেট্রিক টন। বছরে খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ব থাকছে ৫১ হাজার ৭২২ মেট্রিক টন। যা স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা যাবে।

কৃষি বিভাগ জানায়, বছরের যে কোনো সময় বা সারা বছর এসব গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ করা যায়। তবে সাধারণত গ্রীষ্মকালে দুইবার ও শীতকালে একবার এই পেঁয়াজ চাষাবাদ হয়। আর গ্রীষ্মকালীন নাসিক-এন ৫৩ জাত ও বাংলাদেশি বারি-৩ ও ৫ জাতের বীজ বেশি আাবাদ হয় এবং ফলনও বেশ ভালো। প্রতি বিঘায় গড় ফলন হয় ১২০-১৫০ মণ। বিঘায় মোট খরচ হয় ২৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। বয়সকাল বীজ থেকে উত্তোলন পর্যন্ত ৮০ থেকে ৯০ দিন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এবার প্রণোদনা কর্মসূচির মাধ্যমে উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে ১৮০ জন কৃষককে এক বিঘা করে ১৮০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদে বিনামূল্যে বীজ, সার ও আন্তঃপরিচর্যা বাবদ নগদ ২ হাজার ৮০০ টাকা করে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকরা পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ১২০ মণ হারে ফলন হচ্ছে। বাজারে পেঁয়াজের বাজার দরও বেশ সন্তষজনক।  

সরজমিনে গত ০২ জানুয়ারি দুপুরের দিকে এ পেঁয়াজ উত্তোলন কার্যক্রম ও প্রদর্শনী ক্ষেত পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজিনা আক্তার, উপজেলা পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান -১ শিরিন আক্তার, উপজেলা কৃষি অফিসার ফৌজিয়া ফেরদৌস, কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কিশোয়ার হোসেন, জেলা পরিষদ সাবেক সদস্য রঈস উদ্দিন রুবেলসহ কৃষি কর্মকর্তারাসহ কৃষকরা।

এ সময় তারা কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন ও গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদের সফলতার বিষয়ে অবগত হন। একই সঙ্গে তারা শীতকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদের পাশাপাশি 
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।  

এদিকে সুবিধা ভোগী নলডাঙ্গার সড়কুতিয়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর তিনি ১৭ কাঠা জমিতে গ্রীষ্মকালীন নাসিক-এন ৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন। রোপণ থেকে তার পেঁয়াজ উত্তোলনের উপযোগী হতে সময় লেগেছে ৮০-৮৫ দিন। চাষাবাদে তার খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে ৫ কাঠা জমির পেঁয়াজ উত্তোলন করেছেন। কাঠা প্রতি ফলন হয়েছে ৬ মণ। এ হিসেবে বিঘায় ফলন হবে ১২০ মণ। বাজারে এ পেঁয়াজ ১ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি।  

একই গ্রামের কৃষক আনোয়ার করিম ও ইসহাক আলী এবং বিপ্রবেলঘরিয়া ইউনিয়নের নশরৎপুর গ্রামের ইলিয়াস হোসেন জানান, তারা ১ বিঘা করে গত দুই বছর ধরে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ করে আসছেন। বিঘা প্রতি ২০-২২ হাজার খরচ করে ১২০ থেকে ১৩০ মণ হারে পেঁয়াজ ঘরে তুলতে পারছেন এবং দামও সন্তষজনক। এ ফসল চাষাবাদে তারা আশাবাদী এবং সফলতার হাতছানি দেখতে পাচ্ছেন।  

নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসার ফৌজিয়া ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, দেশের মানুষের জন্য সারা বছর পেঁয়াজের খাদ্য চাহিদা মেটানো, বছরজুড়ে ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করাসহ বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা কমাতে এই গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদের জন্য গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে সরকারি প্রণোদনার বীজ, সার ও আন্তঃপরিচর্যা বাবদ নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যাতে কৃষকরা গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদে আগ্রহী হন। কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারে সজাগ আছেন।  

তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদে খরচ কম। ফলন ভালো হয়। সঠিক দামও পাওয়া যায়। তাই এ ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করতে পারলে সারা বছর পেঁয়াজ উৎপাদন হবে এবং খাদ্য চাহিদা মিটবে। পাশাপাশি আর দেশে পেঁয়াজের সঙ্কট   হবে না, বিদেশ থেকেও আর পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষাবাদ দেশের জন্য একটি যুগান্তকারী মাইল ফলক বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।