ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

দেলোয়ারের বাগান যেন টিউলিপ ফুলের স্বর্গরাজ্য

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩
দেলোয়ারের বাগান যেন টিউলিপ ফুলের স্বর্গরাজ্য বাহারি রঙের টিউলিপ ফুল। ছবি: বাংলানিউজ

গাজীপুর: বাড়ির পাশেই সোয়া এক বিঘা জমিতে বাহারি রঙের টিউলিপ ফুলের বাগান করে সাড়া জাগিয়েছেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্ব খণ্ড এলাকার দেলোয়ার হোসেন।

জনশ্রুতি রয়েছে টিউলিপ ফুলের উৎপত্তির আদিস্থান নেদারল্যান্ডস।

তবে এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকের মতে, এই গাছ পামির মালভূমি এবং হিন্দুকুশ পর্বতমালা অঞ্চল থেকে উদ্ভুত হয়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে।

নেদারল্যান্ডসের জাতীয়ভাবে টিউলিপ ফুলের কদর রয়েছে। এমনকি টিউলিপ ফুল নেদারল্যান্ডসের জাতীয় প্রতীকও। প্রতিবছর নেদারল্যান্ডসে টিউলিপ ফুলের উৎসব করা হয়। আর বাংলাদেশের মাটিতে এ ফুল ফুটিয়ে সাড়া জাগিয়েছেন শ্রীপুরের দেলোয়ার হোসেন।



প্রতিদিন তার টিউলিপ বাগান দেখতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এসে ভিড় করছেন।  ইতোমধ্যে তার বাগান পরিদর্শন করেছেন নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ হাইকমিশনের হেড অব মিশন থিজ উডস্ট্রা, শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি এবং মন্ত্রী, সচিব, এমপিসহ দেশের বিশিষ্টজন।  

দেলোয়ারের টিউলিপ বাগান দেখতে জন প্রতি দিতে হয় ১০০ টাকা। ওই টাকার মূল্য দিয়েই লোকজন টিউলিপ বাগানে প্রবেশ করে। অনেকেই বাগানে প্রবেশ করেই ছবি ও ভিডিও করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

বিদেশি জাতের বাহারি রঙের টিউলিপ ফুলের সঙ্গে ছবি, ভিডিও এবং টিকটক করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন অনেকেই। সারি সারি টিউলিপ ফুল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন সবাই।

ফুলচাষি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ২০২০ সাল থেকে তিনি প্রথম টিউলিপ ফুল বাগান করেন। এখন তার বাগানে আট জাতের হাজার হাজার টিউলিপ ফুল রয়েছে। প্রতিটি ফুল তিনি বিক্রি করেছেন ৭০ থেকে ১২০ টাকা। ঢাকাসহ আশপাশ বাজারে এই ফুল বিক্রি করা হয়। অনেকেই বাগান থেকে ফুল কিনে নিয়ে যায়।

গত ১৫ বছর ধরে তিনি দেশীয় জাতের বিভিন্ন ফুল চাষ করছেন। পরে তার বাগানে নতুন করে টিউলিপ ফুল চাষ করা শুরু করেন। বাণিজ্যিকভাবেই তিনি সোয়া এক বিঘা জমির ওপর টিউলিপ ফুল চাষ করেছেন। দেলোয়ার হোসেন টিউলিপ চাষে সফল বলে মনে করছেন।  

তিনি বলেন, নেদারল্যান্ডস টিউলিপ ফুল রপ্তানি করছে। আমরা চেষ্টা করলে ব্যাপকহারে টিউলিপ ফুল উৎপাদন করে রপ্তানির খাতায় নাম লেখাতে পারি।
 
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, টিউলিপ সৌন্দর্য এবং খুবই লাভবান একটি ফুল। জাঁকালো ও আড়ম্বরপূর্ণ ফুলগুলো সাধারণত কাপ কিংবা তারার আকৃতি হয়ে থাকে। টিউলিপ ফুলের অনেক প্রজাতি রয়েছে। আকৃতি এবং ফুলের বর্ণ অনুসারে বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ ফুলের দেখা পাওয়া যায়। অনুমান করা হয় পৃথিবীতে ১শ’টিরও বেশি টিউলিপের প্রজাতি রয়েছে। তবে এগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সংকর জাত রয়েছে।



বিশ্বজুড়ে এত ভিন্ন ভিন্ন রঙের টিউলিপ ফুল ফোটে যে, এদের কতটি প্রজাতি রয়েছে তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করা মুশকিল। বলা হয়ে থাকে যে, অটোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকেই এই ফুলের পরিচিতি রয়েছে। তবে এটি এশিয়ার দেশীয় ফুল। মূলত মধ্য প্রাচ্য, ইরান, আফগানিস্তান এবং চীনে প্রাকৃতিকভাবে টিউলিপ ফুল ফুটতে দেখা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশেও ক্ষুদ্র পরিসরে এই ফুলের চাষ শুরু হয়েছে।

প্রজাতি অনুসারে টিউলিপ গাছের উচ্চতায় বিভিন্নতা রয়েছে। তবে সাধারণত ৪ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত উচ্চতা সম্পন্ন টিউলিপ গাছ দেখা যায়। বসন্তকালীন ফুল হিসেবে এটি পরিচিত। এটি বাল্ব বা মুকুল থেকে জন্মায়। অধিকাংশ টিউলিপ গাছে একটি ফুল ফোটে। কিছু ভিন্ন প্রজাতি রয়েছে যেগুলোর একটি ডাঁটায় কয়েকটি ফুল ফোটে, তবে তার সংখ্যা খুবই অল্প। ভূ-গর্ভস্থ অবস্থাতে এর বৃদ্ধি হয় এবং তুলনামূলক ছোট ছোট শিকড় গজায়। পাতার রং নীলাভ সবুজ বর্ণের। পাতাগুলো প্রান্তযুক্ত হয়ে প্রসারিত। একটি টিউলিপ গাছের ডাঁটায় ২-৬টি পাতা গজায়।

টিউলিপ ফুল লাল, কমলা, হলুদ, সাদা, গোলাপীসহ বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে। গাছে থাকা অবস্থায় একেকটি টিউলিপ ফুল প্রায় ২ মাস পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। ফুলের পর টিউলিপ ফল জন্মায়। এই ফল অনেকটা ক্যাপসুল আকৃতির। পাতার মোড়কে ঢেকে থাকে। টিউলিপ গাছে ফুল ফোটা শেষ হয়ে গেলে সাধারণত এটি মরে যায়। সেসময় কাণ্ড কেটে বাল্বটি মাটিতেই রেখে দিলে পরের শীতে আবার আপনা আপনি প্রতিস্থাপন হয়। বাল্ব’র সাহায্যে টিউলিপ গাছের বংশবৃদ্ধি করা হয়। তবে বীজ দিয়েও করা হয়, কিন্তু অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।

গাজীপুরে মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন দেলোয়ার হোসেন।

এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় ফুল ছাড়াও তাদের প্রকল্পে ছিল ব্যাপক আকারে স্ট্রবেরি ও জি নাইন কলার চাষ। ফুল ও ফল উৎপাদনের পাশাপাশি তারা এগুলোর বীজ স্থানীয়ভাবে কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করছেন। প্রথম বছর দেলোয়ার হোসেনের টিউলিপ বাগান ছিল ২ শতাংশ জমির ওপর।

সফলতা পেয়ে এ বছর তিনি সোয়া ১ বিঘা জমিতে কয়েক হাজার টিউলিপ ফুল চাষ করেছেন। টিউলিপ ও অন্যান্য ফুল-ফলের এই প্রকল্পে কাজ করছেন ২৫ জন নারী-পুরুষ। প্রতিবছর নেদারল্যান্ডস থেকে টিউলিপ ফুলের বাল্ব আমদানি করেন দেলোয়ার হোসেন।

আওলাদ হোসেন মামুন নামে এক দর্শনার্থী বলেন, আগে কোনোদিন সরাসরি টিউলিপ ফুল বা বাগান দেখিনি। এটি বিদেশি ফুল। দেলোয়ার হোসেন নামের এক চাষি গাজীপুরের শ্রীপুরে টিউলিপ ফুল চাষ করে সরাসরি আমাদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। বাগানে সারি সারি ফুলগুলো দেখতে অনেক সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর।
 
তৃপ্তি আক্তার নামে এক নারী বলেন, বিভিন্ন রঙের টিউলিপ ফুল সবাইকে আকৃষ্ট করবে। অন্যান্য ফুলের চেয়ে এই ফুলের সৌন্দর্য ভিন্ন। এ ফুল গাজীপুরের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩
আরএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।