ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ফয়সালের শখের ছাদবাগানে আছে ৫০ ধরনের গাছ 

রাজীন চৌধুরী, সিনিয়র ফটো করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৭ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
ফয়সালের শখের ছাদবাগানে আছে ৫০ ধরনের গাছ  নিজের ছাদবাগানের আমগাছে ধরা আমের পরিচর্যায় ব্যস্ত ফয়সাল। ছবি: রাজিন চৌধুরী

ঢাকা: চলতি বছর দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। তাপদাহ নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ছাদবাগান করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

 

এমনকি দেশের সব সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভায় ছাদবাগান করলে হোল্ডিং করে ১০ শতাংশ ছাড় দেয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।  

এরই সূত্র ধরে আমরা গিয়েছিলাম আবদুল্লাহ আল ফয়সালের শখের ছাদবাগানে।

মঙ্গলবার (২০ জুন) রাজধানীর মিরপুরে তার ছাদবাগান ঘুরে দেখি আমরা। সে সময় কথাও হয় ফয়সালের সঙ্গে। নিজের বাসার ছাদে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, শাকসবজির প্রায় ৫০ ধরনের গাছ লাগিয়েছেন তিনি।

নিজের ছাদবাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত ফয়সাল।  ছবি: রাজিন চৌধুরী

কীভাবে ছাদবাগানে উৎসাহী হলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ আল ফয়সাল বাংলানিউজকে বলেন, ২০২০ সাল। করোনার সময়। সে সময় আমার স্ত্রীকে দেখেই মূলত অনুপ্রাণিত হওয়া। ও প্রথমে বারান্দায় অল্প কিছু গাছ লাগিয়েছিল। কিন্তু, রোদ না পাওয়ায় সেগুলো ঠিকঠাকভাবে বেড়ে উঠতে পারছিল না। পরে, একদিন ওকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য আমি প্রায় ৫ হাজার টাকার গাছ কিনে আনি। ব্যাস, এরপর থেকে চলছে।

ফয়সালের বাগানে, থাই ব্যানানা আম, আম্রপালি, হাড়িভাঙা, বারি-১১, চায়না ড্রপ আম, ডালিম, বাতাবি লেবু, দেশী লেবু, জাম্বুরা, সাদা জাম, আম, কামরাঙা, পেয়ারা, আমড়া, অড়বরই, অগ্নিশ্বর কলা, মরিয়ম খেজুর, ড্রাগন, বরইসহ নানান স্বাদের বাহারি ফলের গাছ রয়েছে।

সবজির মধ্যে ঢেঁড়স, সজনে, ঝিঙা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা, করলা, মিষ্টি কুমড়া, পুঁইশাক, লাউ, কচুর শাক, কারিপাতা, থাইপাতা, বরবটি ইত্যাদির গাছ আছে।

রয়েছে শিউলি, জবা, গাঁদা, কামিনী, ক্যাকটাস কাঁটা মুকুটের মতো ফুলগাছ। ভেষজ গাছের মধ্যে তুলসী, পুদিনা পাতা, এলোভেরা উল্লেখযোগ্য।

ফয়সাল বলেন, ছাদবাগানে যেসব সবজি হয়, তাতে ভালোই চলে। ছোট সংসারে শাক-সবজি তেমন কেনাও লাগে না। গত ২ মাস ধরে ঢেঁড়স কিনি না। আমার বাগানে যেসব ফলমূল বা শাকসবজি আছে, সেগুলোতে আমি সার দিই না। ফলে, টাটকা জিনিস খেতে পারি।

কী কী প্রতিবন্ধকতা আছে ছাদবাগানে এমন প্রশ্নের জবাবে ফয়সাল বলেন, শুনতে অদ্ভুত শোনালেও মূলত ভালো মাটি পাওয়াটাই সমস্যা। ভালো গাছ পাওয়া যায়। কিন্তু, সহজে ভালো মাটি পাওয়া যায় না। মাটি প্রতি বস্তা ৮০ টাকা দরে কিনতে হয়৷ এরপর শ্রমিক দিয়ে আবার তুলতে হয়। সেটার আলাদা খরচ আছে।

আর, গাছপালার জন্য অনেক সময় দিতে হয়, যত্ন করতে হয় যোগ করেন তিনি। ছাদবাগান করলে ১০ শতাংশ কর অব্যাহতি পাওয়া যাবে, বিষয়টি শুনেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফয়সাল বলেন, আসলে হোল্ডিং ট্যাক্স কমালে যারা ভূমিসহ বাড়ির মালিক, তারা লাভবান হবেন। আমাদের তো নিজেদের ফ্ল্যাট। বা যারা ভাড়া আছেন, তারাও এতে উপকৃত হবেন না। আমার যেটা মনে হয়, পানির ট্যাক্সটা কমালে বরং ভালো হয়। গাছেও প্রচুর পানি দেওয়া লাগে।

ফয়সালের ছাদবাগানের শাকসবজি।  ছবি: রাজিন চৌধুরী

ভবিষ্যতে কি পরিকল্পনা আছে ছাদবাগান নিয়ে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি আরও গাছ বাড়াবো। লিচু এবং আরও অনেক জাতের আম গাছ বাড়াবো। রংপুরের এক নার্সারি মালিকের সাথে কথা বলেছি, তিনি একটি আম গাছের কলাম দেবেন, যেখানে একটা গাছেই ২০টি জাতের আমের ফলন হবে। ফয়সালের দেখাদেখি অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন এমন পর্যবেক্ষণ আমাদের। তিনি যখন প্রথম বাগান শুরু করেন, তখন ওই ভবনের অন্য ফ্ল্যাট মালিকরা আপত্তি জানিয়েছেন। তবে, তার সফলতার পর আশেপাশের অনেকেই বাগান করতে উৎসাহিত হচ্ছেন তিনি জানান। সেটির সত্যতাও আমরা দেখেছি।  

তিনি মনে করেন, ঢাকায় মানুষ যদি ছাদবাগানে আরও উৎসাহিত হয়, তাহলে আগামীদিনে এই নগরী আরও বেশী সবুজ, বাসযোগ্য হয়ে উঠবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০২৩
আরসি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।