ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

‘জমিতে আমার টাকার খনি’

মো. জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২৩
‘জমিতে আমার টাকার খনি’

কুষ্টিয়া: ‘প্রতিদিন সকাল-বিকাল মাঠে আসি। দুপুরেও মাঝেমধ্যে আসি।

যখনই আসি ৫০০-১ হাজার টাকা পকেটে আসেই। প্রতিদিন যতবার আসবো ততবারই টাকা। জমি এখন টাকার খনি আমার। জমিতে আসলেই টাকা। ’

এভাবেই উৎফুল্লচিত্তে কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের খয়েরপুর এলাকার সবজিচাষি মহিবুল ইসলাম।

এ কৃষক বাংলানিউজকে বলেন, সবজি চাষ করে এখন আর অভাব হয় না। প্রতিদিন বিক্রি করে প্রতিদিন টাকা পাই। অন্য ফসলের তুলনায় কম জমিতে বেশি লাভ পাচ্ছি এই সবজি চাষে।

মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘ধান, পাট, ভুট্টা, সরিষা এগুলো তো অনেকেই চাষ করে। একবারে বিক্রি করে টাকা হাতে আসে। এগুলো চাষ করতে গেলে  দীর্ঘসময়ের অর্থলগ্নি করতে হয়। আমার চাই, রোজ টাকা পাব এমন ফসল। অ তাই সবজি চাষ করি। সবজি এমন একটা চাষাবাদ যেটা চাষির পকেটে টাকা ফুরাতে দেবে না। মাঠে আসি, কিছু না কিছু তুলে নিয়ে বাজারে বিক্রি করলেই টাকা। এবছর আমি ১০ কাঠা জমিতে পুঁইশাক, ১০ কাঠা জমিতে মরিচ, ১ বিঘা জমিতে ঢেঁড়স, ১ বিঘায় লাউ এবং ১০ কাঠা জমিতে সিম চাষ করেছি। ’

মহিবুলের ক্ষেতের প্রতিটি মাচায় পুঁইশাকের সমাহার

তিনি আরো বলেন, মাচা দিয়ে পুঁই চাষ করায় বাজারে অন্য পুঁইয়ের চেয়ে আমার পুঁইয়ের চাহিদা বেশি, দামও ভালো। গড়ে ২৫ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি করি। প্রতিদিন যদি আমি পুঁই কেটে বিক্রি করি তাও ৩ মাস লাগবে শেষ হতে। কারণ, একদিক থেকে কাটবো অন্যদিকে আবার কাটার উপযুক্ত হয়। ১০-১২ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে আমার। ৭০-৮০ হাজার টাকার মতো লাভ হবে এই পুঁই বিক্রি করে। শীতকালে আবার পুঁই লাগাবো, তখন পুঁই এর ফল বিক্রি করব। ’

ঢেঁড়স আবাদ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ঢেঁড়স চাষ করেছি। এবার ঢেঁড়সের দাম একটু কম। ৬০০ টাকা মণ হিসাবে বাজারে বিক্রি করছি। রোজ ঢেঁড়স তুলি আর বাজারে বিক্রি করি। প্রতিদিন গড়ে ৫০ কেজি করে ঢেঁড়স বিক্রি করি। বাজার একটু ভালো হলে বেশি লাভ হবে। এই জমিতে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখনো প্রায় ১২০-১৫০ মণ ঢেঁড়স পাব। ’

তিনি জানান, ১ বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছেন লাউ এখনো ধরেনি। লাউও রোজ কাটা যায় এবং বিক্রি কর যায়।  

স্থানীয় কৃষক তারিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘মহিবুল ইসলাম এই এলাকায় সবজি চাষ করে বেশ স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার দেখাদেখি অনেকেই সবজি চাষ শুরু করেছেন। মহিবুলের পুঁইশাক, ঢেঁড়স বেশ ভালো দামে বিক্রি করছে। ’ 

তিনিও জানান যে, সবজি চাষে লাভ গতানুগতিক ধান-পাটের চেয়ে বেশি।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমি প্রায় নিয়মিত মহিবুলের ক্ষেত পরিদর্শন করে পরামর্শ দিই। ’

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সবজি একটি উচ্চমূল্যের ফসল। কৃষকরা সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন বিধায় তারা আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা সরকারী বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষকদের বীজ, সার দিয়ে আসছি। ’

যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘যশোর কৃষি অঞ্চল কৃষিতে সমৃদ্ধশালী। বিভিন্ন উচ্চমূল্যের ফসল চাষে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। সেই সঙ্গে কৃষক -কৃষাণীদের সবজি ও ফল চাষে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করছি। এ অঞ্চলে সবজি চাষ দিনদিন বেড়েই চলছে।  

এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়:  ১৬০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।