ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

কৃষি

সরিষা চাষে লাভবান ময়মনসিংহের কৃষকেরা, আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণ

আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
সরিষা চাষে লাভবান ময়মনসিংহের কৃষকেরা, আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণ

ময়মনসিংহ: চলতি মৌসুমে সরিষা চাষে লাভবান ময়মনসিংহের কৃষকেরা। সেই সঙ্গে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ময়মনসিংহ অঞ্চলে সরিষার আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণ।

এতে ফলন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষকেরা।  

কৃষি বিজ্ঞানীরা জানান, গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ সরিষা, অঞ্চল ভেদে এটি সরষে নামেও পরিচিত। ভোজ্যতেল হিসেবে এর কদর ব্যাপক। মাত্র দুই মাসেই শীতকালীন এই ফসল ঘরে তোলা যায়। ফলে বর্তমানে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষিক্ষেত্রে সরিষা আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করছে সরকার।  

সরিষা চাষিরা জানান, আমন ধান কাটার পর শুরু হয় সরিষার আবাদ। চাষের ক্ষেত্রে প্রতি বিঘা জমিতে এক থেকে দুই কেজি সরিষা ছিটিয়ে দিতে হয়। এরপর খুব বেশি যত্ন ছাড়াই জমিতে বেড়ে উঠতে থাকে সরিষা গাছ। এভাবেই ৬০ থেকে ৭০ দিন পর সরিষা গাছের ফলন পরিপক্ক হওয়ার পর গাছ কেটে সংগ্রহ করা হয়। এতে ভালো বীজ হলে এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১৫ মণ সরিষা উৎপাদন হয়ে থাকে। মণ প্রতি বর্তমান বাজার দর তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা পর্যন্ত।    

কৃষকেরা আরও জানান, রবি মৌসুমের ফসল সরিষা সংগ্রহ করে ওই জমিতেই বোরো চাষ করা যায়। এ কারণে দুই ফসলি জমি থেকে তিন ফসলি কৃষিকাজ করার সম্ভব। ফলে সরিষা চাষে অল্প সময়ে বাড়তি লাববান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।  

জেলার ভালুকা উপজেলার কাচিনা এলাকার চাষি এসএম আব্দুর রউফ রুদ্র বাংলানিউজকে জানান, এবার ২০ কাঠা অর্থাৎ ৫০ শতক জমিতে সরিষা চাষ করেছিলেন তিনি। এতে অন্যান্য বছরের তুলনায় ফলন বেশি হয়েছে তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৬১ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হলেও এবার আবাদ বেড়ে হয়েছে ৯৭ হাজার ১৮৬ হেক্টর। এতে আবাদকৃত জমি বৃদ্ধি হার ৬২.৮১ শতাংশ। ফলে চলতি মৌসুমে ময়মনসিংহ বিভাগের এক লাখ ৫৬ হাজার কৃষককে এক বিঘা জমির জন্য জনপ্রতি এক কেজি করে সরিষা বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় ৪৭ হাজার ৪০০ জন, জামালপুরে ৫৪ হাজার ৬০০ জন, নেত্রকোনায় ২৫ হাজার ২০০ জন এবং শেরপুর জেলায় ২৮ হাজার ৮০০ জন কৃষকের মধ্যে এই প্রণোদনা দেওয়া হয়। প্রণোদনার মধ্যে বারি ১৪, বিনা-৪, ১৫ ও ১৭ জাতের সরিষার বীজ রয়েছে।  

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার কৃষিক্ষেত্রে সরিষা আবাদে ব্যাপক জোর দিয়েছেন। এতে তিন বছরের একটি পরিকল্পনা নিয়ে ৪০ শতাংশ তেল আমদানি নির্ভরতার বিষয়ে ভাবছে সরকার। এ কারণে বিগত ছয় মাস ধরে কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অনাবাদি জমিতেও সরিষা চাষে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বর্তমান সমাজের মানুষ স্বাস্থ্য সর্ম্পকে অনেক সচেতন। ফলে মানুষ এখন সয়াবিন তেল ছেড়ে সরিষা তেলের দিকে ঝুঁকছে। এতে চাহিদা বেড়েছে সরিষা তেলের। ফলে চলতি মৌসুমে স্থানীয় জাত ছাড়াও বিনা ও বারী জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি কর্মকর্তারা।  

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোছা. নাসরিন আক্তার বানু বাংলানিউজকে বলেন,
সরিষা আবাদে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। গত বছর ময়মনসিংহ জেলায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হলেও এবার আবাদ হয়েছে ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে। এতে ফলন ভালো হওয়ায় খুশি কৃষকেরা।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।