মৌলভীবাজার: দেশব্যাপী চলমান প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ এবং অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের ফলে বিভিন্ন রোগ ও কীটপতঙ্গ ছড়িয়েছে মৌলভীবাজারের চা বাগানগুলোতে। এ অবস্থায় চলতি মৌসুমে উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্ক করছেন চা শিল্প সংশ্লিষ্টরা।
চা বাগানগুলোতে চা গাছের জন্য ধারাবাহিকভাবে যতটুকু বৃষ্টির প্রয়োজন ততটুকু হচ্ছে না। ফলে নতুন করে পাতা গজাচ্ছে না, উল্টো অতি খরায় শুকিয়ে যাচ্ছে চায়ের পাতা। পাশাপাশি মাটির আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় পাতা গজানো কমে গেছে। তবে বাংলাদেশ চা বোর্ডের আওতাধীন বাংলাদেশ চা গবেষণা কাজের সাথে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞরা তা মানতে নারাজ। তারা বলছেন, চা মৌসুমের খরার দ্বিতীয় ধাপ (Second drought) অতিক্রম করছে।
গত কয়েকদিন ধরে টানা তাপদাহে বিপন্ন হয়ে পড়ছে জনজীবন। এর প্রচণ্ড প্রভাব পড়েছে জেলার চা বাগানগুলোতেও। তবে মাঝে মাঝেই হচ্ছে অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত।
শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে তাপমাত্রা গড়ে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করেছে। এদিকে চা-বাগান এলাকায় কিছু কিছু চা গাছে লাল মাকড়সা (রেড-স্পাইডার) ও মশারহেলোপেনটিস আক্রমণ দেখা দিয়েছে। চা উৎপাদনের এই অনুকূল মৌসুমে চা গাছগুলোতে কীটপতঙ্গের আক্রমণের ফলে চা গাছগুলো বিবর্ণ হয়ে পাতা কুঁকড়ে যাচ্ছে। একে চা বাগানের ভাষা ‘বাঞ্জি’ বলে। বাগানগুলোর সেকশনে দেখা দিয়েছে এই রোগগুলোর প্রকোপ।
বাংলাদেশি চা সংসদের সিলেটে ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান জিএম শিবলি বাংলানিউজকে বলেন, অতি খরায় চায়ের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দিন দিন তাপদাহ বাড়তে থাকায় চা গাছের রোগের জন্য আমরা নিয়মিতভাবে রাসায়নিক কীটনাশক ছিটাচ্ছি। ফলে রোগবালাই অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। বর্তমানে মৌলভীবাজারের তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ৩৭ ডিগ্রির ওপরে। এতে কিছুটা ক্ষতির মুখে পড়েছে চায়ের উৎপাদন। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত অত্যন্ত জরুরি।
তিনি আরও বলেন, চায়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উত্তম। তবে সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি পর্যন্ত চা গাছ তাপ সহ্য করতে পারে। এর ওপরে গেলেই খরার কবলে পড়বে। বিকল্প হিসেবে আমরা ইরিগেশনের মাধ্যমে পানির যোগান দিয়ে যাচ্ছি। এতে করে আমাদের চা বাগানের ইয়াং টিগুলো রক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু সব চা বাগানে তো আবার ইরিগেশনের পর্যাপ্ত সুব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন জানান, চা মৌসুমে এটি খরার দ্বিতীয় ধাপ (Second drought) অতিক্রম করছে। দীর্ঘ তিন যুগ ধরে চা শিল্পের ওপর খরার এই ঝাপটি আসে। প্রতিবছর আমরা এই নিয়মের ভেতর দিয়েই অতিবাহিত হচ্ছি। এর ফলে আমাদের উৎপাদনে যেমন প্রভাব ফেলেনি, ঠিক তেমনি এবারও সেই ধরনের কোনো আশঙ্কা দেখছি না। তবে এবারের তাপমাত্রা কিছুটা বেশি। তাই আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিয়ে প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছি। আক্রান্ত বাগানগুলো পরিদর্শন করে যথাযথ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
এ অবস্থায় চায়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে ইরিগেশনের পাশাপাশি প্রতি চারটি গাছের মধ্যে গর্ত করে মাটিতে পচা গোবর এর সাথে কিছু টিএসপি মিশিয়ে গর্ত ভরে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও মশা, লাল মাকড়সাসহ কীটপতঙ্গে উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে যথাযথ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের চেয়ারম্যান মহোদয়ও এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল আছেন এবং আমাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, চায়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উত্তম। তবে চা গাছ সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে পারে। এর ওপরে গেলেই খরায় পুড়বে যদি ছায়া তরুর ঘাটতি থাকে। তবে চা বাগানে পর্যাপ্ত ‘ছায়াতরু’ বা ‘শেড-ট্রি’র কারণে এই তাপমাত্রা ৩৫ থেজে ৩৯ ডিগ্রি পর্যন্ত সহনীয়।
বর্তমানে মৌলভীবাজারের তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে গাছের পাতায় অবস্থিত ক্লোরোফিলের মাধ্যমে গাছ যেভাবে খাদ্য আহরণ করে, তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি পার হলেই চা গাছ এই সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এজন্য চা বাগানে ‘শেড-ট্রি’ অত্যন্ত উপকারী।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
বিবিবি/এএটি