মেহেরপুর: দীর্ঘ তীব্র তাপদাহ, গ্রামে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎচালিত সেচ ব্যবহারে বিঘ্ন ও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শেষ মুহূর্তে বোরো ধানের জমিতে ঠিকমতো পানি দিতে না পারায় ধানে অতিমাত্রায় চিটার আশঙ্কা করছেন জেলার বোরো চাষিরা।
তবে, জেলা কৃষি বিভাগ বলছে বোরো ধান প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
সরজমিনে দেখা গেছে, জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বোরো ধানের আবাদ। অধিকাংশ এলাকায় বোরো ধানের শিষ বের হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ জমির ধান পেকেছে। আধা—পাকা হয়েছে ৩০ শতাংশ জমির ধান। এখনও মুকুল ও শিষের পর্যায় আছে ৫০ শতাংশ জমির ধান। অতিরিক্ত গরমের কারণে মুকুল ও শিষ পর্যায়ের ধানগুলো নষ্ট (চিটা) হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে কৃষি বিভাগ থেকে। এ পরিস্থিতিতে কৃষিবিদদের পরামর্শমতে, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নিশ্চিত করতে কৃষকেরা তাদের ধানের জমিতে পানি দিচ্ছেন।
কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলে ধানে চিটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেখানে এবার তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। সর্বশেষ সোমবার (২৯ এপ্রিল) জেলায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবছর জেলায় বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৯ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছে ১৯ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে। এই বছরে জেলায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৩ হাজার ৬৬৫ মেট্রিক টন। গত বছরে এ জেলায় বোরো আবাদ হয়েছিল ১৮ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে।
মেহেরপুরের সোনাপুর গ্রামের কৃষক ফতে আলী ও সবুজ বলেন, আমাদের মাঠে পারিজা ব্রি—ধান ২৮, ২৯, ৫০, ৬৪, হাইব্রিড—৫, এসিআই—৬, বলিয়া—২সহ প্রভৃতি জাতের ইরি—বোরা ধানচাষ করেছেন কৃষকেরা।
এদিকে গ্রামের চাষিরা বিদ্যুৎ বিভাগের ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাদের মতে, গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ খুবই নাজুক। গড়ে ৩—৪ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ তেমন কোথাও থাকে না। ফলে অনেক এলাকায় ফল ও ফসলের গাছে পানি দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে জেলায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে চরম আকারে। জেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া অনেক পানির পাম্প বিকল হয়ে গেছে। পানি সমস্যার কারণে ফল ও ফসলে সঠিক সময়ে পরিমাণমতো পানি দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে ধানক্ষেতে সার্বক্ষণিক সেচের পানি দিতে গিয়ে এ বছর কৃষকদের বোরো ধান উৎপাদনে বিঘাপ্রতি ৭০০—৯০০ টাকা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে বলে জানালেন কৃষকেরা। অথচ গত বছরগুলোতে বোরোক্ষেতে এই সময়ে সেচের পানির প্রয়োজন হতো না বলে জানান তারা।
সদর উপজেলার আলমপুর গ্রামের কৃষক আব্দাল হক বলেন, প্রায় ১০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। জমির অধিকাংশ ধান আধা—পাকা হয়েছে৷ কিছু জমির ধানে মুকুল ও শিষ দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড গরমের কারণে এ বছর বোরো ধান পাতান (চিটা) হতে পারে।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে খেতে পানি দিতে হচ্ছে, উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এতে প্রতিবিঘায় ধান উৎপাদনে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। গত বছরগুলোয় ধানখেতে এ সময় সেচের পানির প্রয়োজন হতো না।
গাংনী উপজেলার মহেষপুর গ্রামের কৃষক সাত্তার আলী ও রমজান বিশ্বাস বলেন, সার, বীজ, তেল ও শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় এমনিতেই প্রতিমণ ধান উৎপাদনে ৯৫০—১০০০ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। বাড়তি সেচে দিতে গিয়ে বিঘাপ্রতি আরও ৭০০—৮০০ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। এ বছর প্রতিমণ ধান উৎপাদনে প্রায় ১১০০ টাকা খরচ হতে পারে বলে জানান তিনি।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, ধানের গাছে গোড়ায় পানি দিতে হবে। বিশেষ করে যে ধান এখন কেবল বের হচ্ছে—এমন ধানগাছের গোড়ায় ২/৩ ইঞ্চি পানি থাকা জরুরি। পানির অভাবে ধান চিটা হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ধানগাছের গোড়ায় পানি নিশ্চিত করতেই হবে। এটা কৃষককে অবহিত করতে জেলায় উপজেলা পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা এবং মাঠ পর্যায়ের ব্লক সুপারভাইজারদের বলা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জেলায় ধান কাটা মাড়াই শুরু হবে। তাই খুব বেশি ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৪
এসএম