ঢাকা, বুধবার, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

শিবচরে পাটের আবাদ বাড়লেও ফলন কম হওয়ার শঙ্কা

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২৪
শিবচরে পাটের আবাদ বাড়লেও ফলন কম হওয়ার শঙ্কা

মাদারীপুর: ফলন ভালো হওয়ায় মাদারীপুর জেলার শিবচরে প্রতিবছরই বিস্তীর্ণ ফসলের জমিতে পাটের আবাদ করে থাকেন কৃষকরা। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি উপজেলায় ফসলের জমিতে শীতকালে সরিষার আবাদ, নিয়মিত নানা জাতের ধান এবং এই মৌসুমের ফসলের মধ্যে পাট থাকবেই।

 

বাজার দর ওঠানামা করলেও পাটের মৌসুমে শিবচরের প্রায় সব এলাকাতেই কমবেশি পাট চাষ হয়ে থাকে। তবে উপজেলার বহেরাতলা, বাঁশকান্দি, কুতুবপুর, কাদিরপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ জমিতে কৃষকেরা পাট চাষ করেন।  

গত বছরের তুলনায় চলতি বছর বেশি জমিতে পাট চাষ করা হলেও ফলন কম হওয়ার শঙ্কা রয়েছে এবার। গত ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময় জমিতে কেবল পাট গজিয়েছিল। তখন ঝড়ের প্রভাবে পাট বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া এবার বর্ষার শুরুতেই জমিতে পানি প্রবেশ করায় পরিণত হওয়ার আগেই পাট কাটতে হয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি বছর ফলন কিছুটা কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার কুতুবপুর, কাদিরপুর, বাঁশকান্দি, বহেরাতলা, নিলখী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমিতে পাটের আবাদ করেছেন কৃষকরা। এই এলাকার পাট ক্ষেতে বন্যার পানি এ বছর আগাম প্রবেশ করায় পাট কাটতে হচ্ছে কৃষকদের। কোনো কোনো স্থানের জমির পাট এখনও পরিণত পর্যায়ে আসেনি। পানিতে ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় পাট কেটে জাগ দিতে হচ্ছে তাদের। এতে করে পাটের ‘ভালো’ আঁশ পাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষকরা।  

এদিকে বন্যার পানি আগেভাগেই ক্ষেতসহ খাল-বিলে প্রবেশ করায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে না চাষিদের।  

কৃষকরা জানিয়েছেন, গত বছর পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল। জমি থেকে দূরবর্তী স্থানে নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে। এতে করে খরচ বেড়ে গিয়েছিল। তবে এবার পাট কেটে ক্ষেত এবং সংলগ্ন খাল-বিলেই জাগ দিতে পারছেন। ফলে পরিবহন খরচ আর লাগছে না। এদিকে উৎপাদন খরচ কিছুটা কম হচ্ছে। বাজারদর ঠিক থাকলে লাভের মুখ দেখবেন বলেও আশা করেন কৃষকরা।

শিবচরের উৎরাইল হাট, চান্দেরচর হাট এবং মাদবরেরচর হাটসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে পাটের বাজারদর রয়েছে মণপ্রতি ২ হাজার ৮শ’ থেকে ৩ হাজার ২শ’ টাকা পর্যন্ত।  

গত মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) উপজেলার উৎরাইল হাটে মান অনুযায়ী ৩ হাজার ২শ’ টাকা মণ পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে পাট। বেশি দাম প্রাপ্তির আশায় অনেক চাষিরা নিজেদের ঘরে পাট মজুদও করে থাকেন বলে জানা গেছে।

উপজেলার উৎরাইল এলাকার কৃষক মো. আচমত আলী বলেন, দাম কম হলে বাজারে বিক্রি না করে অনেক ফসলই আমরা রেখে দেই। পাটও রাখা হয়। এ বছর এখন পর্যন্ত ৩২শ টাকা মণে বিক্রি হচ্ছে পাট। আমার ক্ষেতের পাট এখনও ওঠেনি। জাগ দেওয়া হয়েছে। আশাকরি ভালো দাম পাওয়া যাবে। তবে পাটের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। গত ঝড়ে অনেক পাটের ক্ষতি হয়েছে।

শিবচর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার শিবচর উপজেলায় মোট ১৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করেছেন কৃষকরা। গত বছর যেখানে ছিল ১৩ হাজার ৭শ হেক্টর। এ বছর ৬০ হেক্টর জমিতে আবাদ বেড়েছে। শিবচরে বেশ কয়েকটি জাতের পাট চাষ করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে জিআরও ৯৮৯৭, বিজে আর আই তোষা পাট এবং মেস্তা পাট। এ বছর উপজেলায় ৫২৫ হেক্টর জমিতে মেস্তা পাট চাষ করা হয়েছে। এ উপজেলার মাটি পাট চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। গত ঘূর্ণিঝড় রেমালে বেশিরভাগ জমির পাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে আবাদ বেশি হলেও ফলন কিছুটা কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাদারীপুরের উপ-পরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ বাংলানিউজকে বলেন, এবার পাট চাষিদের জন্য একটি বড় সুবিধা হচ্ছে আগাম বৃষ্টিপাত। ফলে চাষিরা পাট কেটে ক্ষেতের পাশেই জাগ দিতে পারছে। তাতে করে পরিবহন খরচ হচ্ছে না। তাছাড়া ক্ষেতে পানি থাকায় ওই জমিতেই পাট কেটে আবার রোপা আমন লাগাচ্ছেন চাষিরা। তবে আগাম বৃষ্টিপাতের কারণে জমিতে পানি থাকায় পাট কিছুটা আগেই কেটে ফেলা হচ্ছে। যে পাট এক মাস পরে কাটা হতো তা আগেই কাটা হচ্ছে। এতে ফলন কিছুটা কম হতে পারে। তাছাড়া ঘূর্ণিঝড় রেমালেও কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০২৪
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।