মৌলভীবাজার: ধীরে ধীরে আমের মৌসুমে প্রবেশ করছে প্রকৃতি। এর প্রাথমিক রূপ হয়ে প্রতিটি গাছে গাছে ধরে আছে মুকুল।
‘জাতীয় বৃক্ষ’ থেকে উৎপন্ন হওয়া এই বিশেষ ফলটি তৃপ্তি-স্বাদে অতুলনীয়। পুষ্টিবর্ধনে এবং জিহ্বায় স্বাদ আনায়নে আমের জুড়ি মেলা ভার। তাই প্রকৃতিতে আমের রয়েছে নানা ভ্যারাইটি। ল্যাংড়া, আম্রপালি, ফজলি প্রভৃতি সব বিশেষ প্রজাতির আম। কিন্তু আমাদের নিজেদের বসতগৃহের আমগাছগুলো সেই বিশেষ প্রজাতির আম না হলেও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত কিছু পরিচর্যা করলেই অবশ্যই মিলবে সাফল্য। সে কথাই জোর দিয়েছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
নিজের বাড়ির উঠানের দুটো আম বেশি পাওয়া গেছে সেটা বাজার থেকে কেনা আমের থেকে অনেকখানি স্বস্তিদায়ক। আর যাই হোক – নিজের বাড়ির আমতো! আর কোনো কোনো আমগাছ জন্মের নেপথ্যে রয়েছেন আমাদের বাপদাদার সোনালি-সুন্দর অতীত।
মৌলভীবাজারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কৃষির নিয়মটা হচ্ছে মুকুল আসার ১৫ দিন আগে এবং মুকুলের যখন গুটি হবে তখন একটা স্প্রে দিতে হবে। পুরো গাছের ওপর স্প্রেগানের মাধ্যমে এই কীটনাশক ছিটিয়ে দিতে হবে। যেকোনো কোম্পানির কীটনাশক দিলেই হবে। তাহলেই এক ধরনের বিশেষ পোকা আছে সে ডিম পাড়তে পারবে না। আর পাড়লেও ডিমগুলো ধ্বংস হবে। ফলে যখন আম ধরবে তখন আর ভেতর পোকা থাকবে না।
তিনি বলেন, স্প্রে ছিটানোর জন্য ফুডফার্ম লাগে। যারা সচেতন বা আগ্রহী তারা আমাদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ফুডফার্মটি সংগ্রহ করে তাদের নিজেদের গাছে কীটনাশক ছিটাতে পারেন। যারা কীটনাশক দেন তাদের আমগাছে কিন্তু পোকা হয় না।
কৃষি বিভাগ জানায়, বর্তমানে দেশে ২৪-২৫টি আমের জাত বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয়। এর মধ্যে ৮-৯টি জাত রপ্তানি হচ্ছে। প্রত্যেকটি জাতের রয়েছে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আকার, রং, স্বাদ ও ঘ্রাণ। আমের স্বাদ মূলত নির্ভর করে আমের পরিপক্কতা ও সংগ্রহের ওপর।
উদাহরণ টেনে সামছুদ্দিন আহমদ বলেন, উত্তরবঙ্গে যাদের বড় বড় আমের বাগান রয়েছে সেখানে এক ধরনের পেশাদার লোকই দাঁড়িয়ে গেছে। তাদের কাজই হচ্ছে আম বাগানগুলোকে চুক্তির মাধ্যমে নিয়ে নেওয়া। তারা তিনটা মৌসুমে স্প্রে দেওয়ার কাজ করবে।
কীটনাশকের বিষক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, এখনতো আমাদের আমগাছে মুকুল ধরছে। যেহেতু মুকুল আসার ১৫ দিন আগে স্প্রে ছিটানো হয়নি, তাতে সমস্যা নেই। যখন ছোট্ট গুটি হবে তখন অবশ্যই স্প্রে দিতে হবে। আর যখন আম পরিপূর্ণ হবে তখন এর মাঝে কোনো বিষক্রিয়াই থাকবে না। কীটনাশকের বিষক্রিয়া ৭-১০দিন পর্যন্ত থাকে। গুটি থেকে পরিপূর্ণ আমের রূপান্তরিত হয়ে বহুদিন থাকবে। ততদিনে কোনো ক্ষতির সম্ভবনা নাই।
সচেতন মানুষের মাঝে এ তথ্যটা পৌঁছে দিতে হবে, আমাদের বসতবাড়ির আমগাছে যথাসময় কীটনাশক দিলে দুটো বাড়তি আম খাওয়া সম্ভব বলে জানান ওই কৃষিবিদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২৫
বিবিবি/এএটি