ঈশ্বরদী (পাবনা) থেকে: দিন যতো এগোচ্ছে ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে লিচু বাগানগুলো। অতিরিক্ত তাপ সইতে পারছে না ডাগর হয়ে ওঠা লিচুগুলোও।
বয়সের কোঠায় ৬৬ বছর যোগ হওয়া প্রবীণ চাষি আর কিছুদিন পরেই এসব লিচু বাজারে বিক্রি করে সংসারের খরচা বহন করতেন।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজ হাতে লাগানো লিচু গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে মাঝে মধ্যে দীর্ঘশ্বাসও নিতে দেখা গেলো তাকে। যেন স্বপ্নভঙ্গের দীর্ঘশ্বাস, দুঃস্বপ্নে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা।
শুধু আবদুর রহমানই নয়, তার মতো ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় লিচু চাষিদের এখন সঙ্গী হয়েছে স্বপ্নভাঙ্গার গান।
দীর্ঘ ১৬ বছর লিচু চাষে এমন দুর্যোগ মোকাবেলা আর কখনও করতে হয়নি রূপপুর গ্রামের চাষি আবদুর রহমানের।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘ভালো লাভ হওয়ায় চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর লিচু চাষ করেই সংসারের খরব নির্বাহ করেছি। লিচুর লাভের অংশ দিয়ে সংসারের নানা প্রয়োজন মিটিয়েছি, কিন্তু এবার সব শেষ। ’
শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) ঈশ্বরদীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে তপ্ত খরায় এভাবেই কোটি টাকার ক্ষতির সম্ভাবনার কথা জানা গেলো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েকদিনের তাপদাহে লিচুর চামড়া পুড়ে ফেঁটে যাচ্ছে। সঠিক বয়স না হতেই লালচে রঙ ধরে পেকে যাচ্ছে লিচু। কিন্তু এগুলোর মান খুবই খারাপ। এ অবস্থায় না পারছেন বাজারে বিক্রি করতে, না পারছেন এ সমস্যার প্রতিকার করতে।
আওতাপাড়া এলাকার লিচু চাষি ডাবলু বিশ্বাস জানান, গত দুইদিনে সবচেয়ে দেশি জাতের লিচু বেশি পুড়েছে। এছাড়া স্বাদও কমে যাচ্ছে। এই জাতের লিচুই বেশি চাষ হয়ে থাকে।
‘সে হিসেবে এ উপজেলায় প্রায় দুই কোটি টাকার ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ’
একই কথা জানালেন উপজেলার সাহাপুর, ছলিমপুর, জয়নগর, বাশের বাদা, মিরকামারিসহ বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষে ২০ জনের বেশি লিচু চাষি।
আলাপ-চারিতায় লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, এ মৌসুমে লিচুকে কেন্দ্র করে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। এছাড়া কমবেশি প্রায় সব বাড়িতেই লিচুর চাষ হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঈশ্বরদীর ঐতিহ্যবাহী লিচুগুলো সরবরাহ করা হয়। যা স্বাদেও অনন্য।
আবদুল জলিল বলেন, আগাম জাত হওয়ায় দেশীয় লিচুর চাষ বেশি করি আমরা। আর প্রাকৃতিক দুর্যোগটি এ লিচুতেই পড়েছে। খরা অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে ক্ষতির পরিমাণ। এভাবে চলতে থাকলে এ অঞ্চলের লিচু চাষিরা নিঃস্ব হয়ে পড়বেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, তপ্ত রোদের তাপে বাগানে সবুজ পাতার ফাঁকে থোকা থোকা লিচুর বদলে পোড়া ঝোপ পড়ে আছে।
অনেকেই গাছের গোড়ায় পানি ঢেলে লিচুর পোড়া সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ হতাশ হয়ে বাগানেই যাচ্ছেন না।
লিচু চাষি হায়দার বলেন, ‘প্রতি বছর এ সময় এলাকায় আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করে। থোকা থোকা লিচু ঝুলতে থাকে গাছে। কিন্তু এবার একেবারেই ভিন্ন পরিবেশ। ’
‘কার কতো ক্ষতি হবে সেই লোকসানের অংকটা গোনা শুরু করে দিয়েছেন চাষিরা। ’
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মো. হাসানুল কবীর তামাদী বাংলানিউজকে জানান, চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বাগানে প্রতিদিন বিকেলে পানি স্প্রে ও ছত্রাকনাশক ওষুধ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কেমন হতে পারে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সবশেষে এটা বলা যেতে পারে। এখনই বলা সম্ভব নয়। দেশীয় জাতের লিচুরই বেশি ক্ষতি হচ্ছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৬
একে/এমএ