রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে: আমের চাষ ও ব্যবসা, নেশার মতো। মৌসুম এলে এর সঙ্গে যুক্ত হওয়া চাই-ই।
মুখভর্তি পান। পানের রসে ঠোঁটও রাঙিয়েছেন। যেন পান চিবানো ছাড়া অন্যদিকে মনোযোগ দেওয়ার সময়ই নেই। কিন্তু আমের প্রসঙ্গে আসতেই কথাগুলো চাপা রাখতে পারলেন না আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম চাষি দবিরুল ইসলাম।
শিবগঞ্জ উজেলার পকুরিয়া এলাকার এ চাষি জানালেন, আমের সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের সখ্যতা গড়ে ওঠার কথা। তার কথার রেশ ধরে একাধিক চাষির সঙ্গে কথা হয়। দবিরুলের কথার মিলও পাওয়া গেলো শতভাগ।
কথা বলে জানা গেলো, সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার খবর। কারো যদি বাগান না থাকে প্রয়োজনে বাগান কিনে অথবা আম কিনে আমের সঙ্গে যুক্ত হন। শ্রমিকদেরও বেড়ে যায় কাজের ব্যস্ততা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সব বয়সীরা আমের বাগানে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুধু পুরুষ নয়, নারীরাও বাগানে নানা কাজে সহযোগিতা করছেন। আমের ভারে নুইয়ে পরা ডালগুলো বাঁশ দিয়ে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। কোনো আম নষ্ট হলে তা ফেলে দিচ্ছেন। কেউ কেউ বাগান বিক্রি নিয়ে দরকষাকষি করছেন। সবই হচ্ছে এ আমকেই ঘিরে।
শিবগঞ্জ উপজেলার একাডেমির মোড়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন রফিকুল ইসলাম। কাছে ভিড়তেই আম নিয়ে কথার আওয়াজ পাওয়া গেলো। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের এক আমের ব্যাপারির সঙ্গে কথা বলছিলাম। সারা বছর ঠিকাদারির কাজ করি। আর এ সময়ে সব কিছু ফেলে শুরু হয় আম নিয়ে কারবার।
আমের আরেক প্রসিদ্ধ এলাকা রাজশাহী জেলায় ঢুঁ মেরেও পাওয়া গেলো একই চিত্র।
পুঠিয়া উপজেলার রফিকুল ইসলামের পেশা কৃষি। তিনি মূলত পেয়ারা চাষি হিসেবেই পরিচিত। তাই বলে আম নিয়ে কাজ করবেন না তা কি হয়! রফিকুল ইসলাম বলেন, তার কয়েকটি বাগান আছে। এছাড়া শেয়ারেও আরও তিনটি বাগান কিনেছেন।
চারঘাট উপজলোর আবদুল হাকিমের পেশা ব্যবসা। কিন্তু তারও কয়েকটি বাগান রয়েছে। তিনি বলেন, আমের ব্যবসা না করলে মনে হয় যেন কিছু একটা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এসময়ে একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করে। গাছ থেকে আম সংগ্রহ, বিক্রির জন্য ব্যাপারিদের সঙ্গে যোগাযোগ অথবা নিজেই বাজারে বিক্রি করতে যাওয়া এগুলো নিয়ে খুব ভালো সময় কাটে।
সিরামিকের ব্যবসার পাশাপাশি আম চাষ করেন ইসমাইল খান শামীম। শিবগঞ্জ উপজেলার সেলিমাবাদের এই চাষির বড় বড় চারটি বাগান রয়েছে। এবার তিনি দেশের বাইরে আম রপ্তানির জন্য কাজও করছেন।
শামীম বলেন, বাজার ব্যবস্থা উন্নত হলে আমের ব্যবসায় এ অঞ্চলের মানুষেরা আরও ভালো আয় করতে পারতেন। এ সময়ে সবাই প্রচুর পরিশ্রম করেন। নিবিড় যত্নে বাগানের পরিচর্যা করেন। কিন্তু মাঝেমধ্যে আর্থিক ক্ষতিতেও পড়তে হয়।
আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানালেন, আমের মৌসুমে কয়েকশ’ কোটি টাকার ব্যবসা হয় এ অঞ্চলে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকে এলাকা। কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানও এই আমকে ঘিরে তৈরি হয়। সবাই নানা স্বপ্নও বুনে থাকেন এ মৌসুমকে কেন্দ্র করে।
আম গবেষক ও বিজ্ঞানী ড. শরফ উদ্দিন দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এই দুই জেলায় আম নিয়ে কাজ করছেন। তিনি তার অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, আমের মৌসুমে এসব এলাকায় পা রাখলে বোঝা যাবে আম নিয়ে ব্যস্ততার চিত্র। সবার মাঝে একটা উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
আর কিছুদিন পরেই আমে পাক ধরতে শুরু করবে। তাই এখনকার ব্যস্ততা একটু বেশি দেখা গেলো এসব অঞ্চলের আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের মাঝে।
এদিকে গত প্রায় এক মাস ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় আমের উপর বেশ প্রভাব পড়েছে। এতে চিন্তিত চাষিরা। তবে বুধবার (০৪) দিবাগত রাতে মাঝারি বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে তাদের মনে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৬
একে/জেডএস