ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

স্বপ্ন নিয়ে সোনালী আঁশ কাটার ধুম 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৬
স্বপ্ন নিয়ে সোনালী আঁশ কাটার ধুম  ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বেনাপোল (যশোর): এবার পাট উঠলে ষষ্ট শ্রেণির ছাত্রী মৌকে ভালো একটি টেবিল ও তার ভাই পঞ্চম শ্রেণির আসাদকে বাই সাইকেল কিনে দিতে চেয়েছেন বাবা হাসান।  

তাই মহাআনন্দে তারা বাবার সঙ্গে মাঠে এসেছে পাট কাটার কাজে সাহায্য করতে।

 

সম্প্রতি কথা হয় মৌ এবং আসাদের বাবা হাসানের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে পাট চাষে খরচ অনেক, কিন্তু সে তুলনায় লাভ কম। গতবার চার বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। কিন্তু ভালো দাম না পাওয়ায় এবার তিন বিঘা জমিতে চাষ করেছি। এবার বাজার দরের কী অবস্থা হবে বলা যাচ্ছে না। তাই খরচ বাঁচাতে দুইদিন ধরে নিজেই নিজের জমির পাট কাটতে শুরু করেছি।  

তিনি বলেন, দুপুরে বাড়িতে খেতে গিয়েছিলাম। এসময় স্কুল ছুটি শেষে বাড়িতে ফিরে ছেলে-মেয়েরা বায়না ধরে আমার সঙ্গে মাঠে আসবে। ওরা আনন্দ পাচ্ছে জেনে আমি আর না করিনি। পাটের ভালো দাম পেলে তাদের শখের কিছু কেনাকাটা করবো।

যশোরের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দুই/তিনদিন ধরে শুরু হয়েছে সোনালী আঁশ পাট কাটা। নিচু এলাকায় ফলন ভালো হওয়ায় একটু আগেই শুরু হয়েছে পাট কাটা। পাট কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।

ভরা বর্ষা মৌসুম হলেও এখনো পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছেন না তারা। অনেকে পাট কেটে রাস্তার ধারে, বাড়িতে বা পানিশূন্য খালে ফেলে রেখেছে বৃষ্টির অপেক্ষায়। এতে আঁশ শুকিয়ে পাটের মান নষ্ট হচ্ছে।  

শার্শার উলাশি ইউনিয়নের পানবেড়ে গ্রামের পাট চাষি ইসরাফিল বলেন, এবার ছয় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। প্রতি বিঘার জন্য বীজ কিনতে দুইশ’ টাকা, শ্রমিক দিয়ে নিরানি দিতে চার হাজার টাকা, পানি এক হাজার, লাঙল দুই হাজার, সার দেড় হাজার, পাট কাটা থেকে আঁশ ছাড়াতে লাগে আরো ছয় হাজার টাকা। সব মিলিয়ে খরচ হয় ১৪ হাজার সাতশ’ টাকা। গেল বছর পাটের দাম পেয়েছিলেন মণ প্রতি ১৩শ’ টাকা। এতে লোকসান গুণতে হয়েছিল তাকে।

শার্শার যদুনাথপুরের চাষি রেজাউল ইসলাম বলেন, পাট চাষে অনেক খরচ। পরিশ্রমও বেশি। কিন্তু সে অনুযায়ী বাজারদর পাওয়া যায় না। চাষাবাদকেই পেশা হিসেবে নিয়েছি বলে জমি ফেলে রাখি না। পাট কাটা শেষে জমিতে শুরু করবো আমন ধানের চাষ। অর্থের প্রয়োজনে মহাজনদের কাছে আগাম পাট বিক্রি করে টাকা নিতে হয়। শুরুতে সরকার যদি ধানের মতো পাটের দাম ঘোষণা ও সংগ্রহের ব্যবস্থা করে তাহলে চাষি ও মহাজনদের কিছুটা লাভ হতো।

বাংলার সোনালী আঁশ হিসেবে পরিচিত পাট চাষে চাষিদের আগ্রহ ধরে রাখতে নায্য মূল্যের বিষয়টিও সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।  

বেনাপোলের ছোটআঁচড়া গ্রামের আড়ৎদার গণি অ্যান্ড সন্স এর মালিক আব্দুল গফুর বাংলানিউজকে বলেন, গতবার তারা প্রতিমণ পাট ১১শ’ টাকা থেকে শুরু করে ২১শ’ টাকা পর্যন্ত কিনেছিলেন। এবার কি হয় তা নিয়ে চিন্তায় আছি।  

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে এ বছর চার হাজার নয়শ’ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেখানে চাষ হয়েছে পাঁচ হাজার সাতশ’ হেক্টর জমিতে। গতবারের তুলনায় এবার ফলনও ভালো হয়েছে।  

পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে পাট পচানোর সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, রাস্তার পাশে গর্তে শ্যালো মেশিন (পানির তোলার পাম্প) দিয়ে পানি তুলে পাট পচানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৬
এসআই 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।