ধুনট (বগুড়া): সবজির বাজার মন্দা। ধান চাষে লোকসান গুণতে হয়েছে।
কিন্তু এ অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষেরই উপার্জনের প্রধান উপায় কৃষি। ফলে চাষাবাদে লাভের মুখে না দেখলেও দমে যাননি তারা।
অন্যান্য ফসলের লোকসান পুষিয়ে নিতে কোমর বেঁধে সোনালী আঁশ (পাট) চাষে মাঠে নামেন তারা। দিন যায় আর সোনালী আঁশে সোনালী দিনের স্বপ্ন বোনেন তারা।
অবশেষে কৃষকদের মলিন মুখে দেখা দিয়েছে বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই সোনালী হাসি। পাটের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি ভাল দাম পেয়ে কৃষকরা এবার যারপরনাই খুশি।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) সকালে সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও হাট-বাজার ঘুরে একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
সাত-সকালেই দেখা গেলো, কৃষকরা পাট কেটে নদী, খাল, পুকুর, বিল ও ডোবায় জাগ দিচ্ছেন। অনেকেই পানিতে জাগ দেওয়া পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত। রাস্তার দুই ধারে ও বাড়ির উঠানে চলছে পাট শুকানোর কাজ।
উপজেলার ধেরুয়াহাটি গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন জানান, তিনি এবার ৩ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১০ মণ করে পাট উৎপাদন হয়েছে। প্রতি মণ পাট বাজারে বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৭০০ টাকা দরে। প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টাকা। এতে উৎপাদন খচর বাদে প্রতি বিঘায় লাভ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা।
ঈশ্বরঘাট গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম জানান, তার ১ বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭ হাজার টাকা। এরমধ্যে বীজ-কীটনাশক ৫০০ টাকা, জমি তৈরি ৫০০ টাকা, সার ১ হাজার ৩০০ টাকা, জমি নিড়ানি ১ হাজার ২০০ টাকা, পাট কাটতে ১ হাজার ২০০ টাকা, জমি থেকে পরিবহন ও পানিতে জাগ দেওয়া ৮০০ টাকা, পাটের আঁশ ছাড়ানোয় ১ হাজার ৩০০ টাকা ও বাজারে পরিবহনে ২০০ টাকা।
তিনি জানান, ১ বিঘা জমিতে পাট উৎপাদন হয়েছে ৮ মণ করে। বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে। এতে বিঘাপ্রতি মুনাফা ৭ হাজার ১০০ টাকার মতো।
স্থানীয় পাট ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের জানান, সরকার পাটজাত পণ্যের ব্যবহারের প্রতি জোর দেওয়ায় এবার মোকামে পাটের চাহিদা বেশি। তাই দামও ভাল পাওয়া যাচ্ছে। মোকামে দাম ভাল থাকায় কৃষকের কাছ থেকে ন্যায্য মূল্যে পাট কিনছেন তারা।
ধুনট উপজেলা উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছোবাহান বাংলানিউজকে জানান, গত বছর পাটের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় সঠিক সময়ে জমিতে বীজ বপনের সুযোগ পাওয়ায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ১৩ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে দেশীয়, তোষা ও মেস্তা জাতের পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্ত পাট চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ৪৭৫ বিঘা জমিতে। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৩ হাজার ৯৭৫ বিঘা বেশি জমিতে পাটের চাষ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৬
এসআর