চরের পলি বা বেলে যুক্ত মাটি সাধারণত পানি ধরে রাখতে পারে না। পানির স্তরও তেমন একটা ভাল না।
ভুট্টাও তেমন একটি ফসল। ভুট্টার জমিতে সেচ কম দিতে হয়। ফলনও বেশ ভাল হয়। প্রায় সময়ই বাজারে দাম ভাল থাকে এ ফসলের। ধান চাষের তুলনায় অনেকটা লাভজনক।
জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায় ভুট্টার ফল বাদে বাকি অংশ। গো-খাদ্যের জন্য উপযুক্ত ভুট্টার গাছ। অন্য ফসলের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা যায় এ ভুট্টা।
রোগবালাই তেমন একটা নেই। মানুষের নানা ধরনের খাদ্য ও শিল্পজাত ছাড়াও বহুবিধ কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে এ ফসল। সবমিলিয়ে ভুট্টাতেই ভাগ্য বদলাতে চান চরাঞ্চলের মানুষজন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা হলে এসব তথ্য ওঠে আসে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে এ জেলায় প্রায় ৭হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে চরাঞ্চলের তিনটি উপজেলায় প্রায় ২হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে ভুট্টা লাগানো হয়েছে।
বিঘার পর বিঘা জমি ছেয়ে আছে সবুজে। বেশ শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে খেতের গাছগুলো। অনেক গাছে ফুল এসেছে। ভুট্টার কলা (স্থানীয় ভাষায়) ধরেছে অনেক গাছে। আবার অনেক গাছ এখনো খানিকটা ছোট।
অনেক খেতে গাছের কলার দানা পুষ্ট হওয়ার পথে। আগামভাবে লাগানো খেতের ভুট্টা উঠতে বড়জোর দুই সপ্তাহের মতো সময় লাগতে পারে। এপ্রিলের শেষ নাগাদ পুরোদমে ভুট্টা উঠানো শুরু হবে।
লাল মিয়া, মুনছুর রহমান, আবির আলী, মোকছেদুর রহমানসহ একাধিক ভুট্টা চাষি বাংলানিউজকে জানান, প্রায় ৩ বছর আগ থেকে চরাঞ্চলের কৃষক অল্প অল্প করে ভুট্টার আবাদ শুরু করেন। সময়ের ব্যবধানে চাষের জমির পরিধি বাড়িয়ে নেন তারা। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরও চরের অনেক জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।
তারা আরো জানান, চরের মাটি বেলে যুক্ত। পানি ধরে রাখতে পারেনা। ফসলের জমিতে পানি দিতে না পারলে ফসল ভাল হয় না। তবে ভুট্টার জমিতে খুব একটা সেচের প্রয়োজন হয় না। ধানের তুলনায় এ ফসল চাষও অনেকটা সহজ। এছাড়া ব্যবসায়ীদের কাছে চরাঞ্চলের ভুট্টার চাহিদাও ভাল। এ কারণে বিক্রি করতেও সমস্যা হয় না।
ভুট্টা চাষি দেলোয়ার হোসেন, শহিদুল ইসলাম, রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, চরাঞ্চলে উৎপাদিত ভুট্টার দানা অত্যন্ত পুষ্ট হয়। দানাও বেশ বড় হয়। চরের তপ্ত বেলে মাটির ওপর বিশেষভাবে নেট ফেলে তার ওপর ভুট্টা শুকানো হয়। এতে ভুট্টার দানা অত্যন্ত শক্ত হয়। ফলে চরের ভট্টা উঠতেই বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এসব এলাকায় ব্যাপারী পাঠিয়ে দেন।
এসব চাষিরা জানান, প্রতিবিঘার বিপরীতে তাদের খরচ হবে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা। এরমধ্যে বীজ, সার, পানি, জমি প্রস্তুত, লাগানো, শ্রমিক মজুরি, কাটা-মাড়াইসহ আনুষাঙ্গিক খরচ রয়েছে। প্রতিবিঘায় উৎপাদন হয় গড়ে ২৫-৩০ মণ হারে। প্রতিমণ ভুট্টা বিক্রি হবে কমপক্ষে ৫৫০-৬০০টাকা মণ করে বলেও জানান এসব চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের হর্টিকালচার সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, দিন যতোই যাচ্ছে, চরাঞ্চলে ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। গেল নভেম্বরের মাঝামাঝি এ জেলায় ভুট্টার চাষ শুরু হয়েছে। ভুট্টার আবাদ উঠতে মোটামোটি ১১০ দিনের মতো সময় লাগে।
তুলনামূলক স্বল্প খরচে এ ফসল চাষ করা যায়। লাভ বেশি হয়। এছাড়া সেচ কম লাগে। এসব বিবেচনায় চরাঞ্চলের মানুষের কাছে ভুট্টা চাষ দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলেও যোগ করেন কৃষিবিদ আব্দুর রহিম।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭
এমবিএইচ/এসএইচ