পিরোজপুরের নাজিরপুর, নেছারাবাদ ও বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ এ হাটে কৃষিপণ্য কেনাবেচা করেন। কৃষিপণ্যের পাইকাররা এ হাট থেকে পণ্য কিনে ঢাকা, বরিশালসহ বিভিন্ন শহরে নিয়ে যান।
সরেজমিন ভাসমান হাটে গিয়ে দেখা যায়, বেলুয়া নদীর বুকে শত শত ডিঙি নৌকায় কৃষিপণ্য। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, টমেটো, শিম, লাউ, আলু, মিষ্টি কুমড়া, মরিচে ডিঙি নৌকাগুলো পরিপূর্ণ। ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে হাটে এসেছে ফড়িয়া। ছোট নৌকা থেকে কৃষিপণ্য কিনে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় তোলা হচ্ছে। হাটে শাক সবজি ছাড়াও ধান, চাল, মুড়ি, নারিকেল, সবজির চারা, ফুল ও ফলের চারা বিক্রি হচ্ছে। নৌকাতেই ভাজা হচ্ছে পিঠা। বিক্রিও নৌকাতেই। নৌকায় মাইক লাগিয়ে হরেক পণ্যের বিক্রেতা হকারিও করছে।
স্থানীয়রা জানান, এই বৈঠাকাটা নামের উৎপত্তি নৌকার বৈঠা থেকে। অনুন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এ অঞ্চলের মানুষ নৌ পথে চলাচল করে আসছে। প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে নৌকা। হাট-বাজারে যাতায়াত, বেড়াতে যাওয়া, এমনকি বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসায় তারা নৌকা ব্যবহার করে।
বৈঠাকাটা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুস সোবহান বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৫৪ সালে প্রথম বৈঠাকাটায় হাট বসে। আশপাশের গ্রামগুলোর সঙ্গে বৈঠাকাটার নৌ যোগাযোগ সহজ হওয়ায় কৃষকরা নৌকায় করে ফসল হাটে নিয়ে আসতেন। বাজারের ক্রেতারাও নৌকায় হাটে আসতেন। ফলে নৌকা থেকে পণ্য কিনে নৌকায় তোলা হতো। এভাবে বৈঠাকাটা বাজারের পাশে বেলুয়া নদীতে চলতো কেনাবেচা। এভাবেই ভাসমান হাটের শুরু। বর্তমানে বৈঠাকাটা সবজির হাটটি দেশের অন্যতম বৃহৎ কৃষিপণ্যের হাট।
নাজিরপুর উপজেলার কলারদোনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বাহাদুর বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকার শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ কৃষিজীবী। স্থানীয় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বৈঠাকাটা ভাসমান হাটে বিক্রি করেন। হাটে দূর দূরন্ত থেকে সবজি ব্যবসায়ীরা এসে শাক সবজি কিনে নেন। এ কারণে কৃষক এ হাটে পণ্যের ভালো দামও পায়। হাটকে ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। হাটটির জন্য এ অঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটেছে।
নাজিরপুর উপজেলার মুগারঝোর গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের বাংলানিউজকে বলেন, বাপ দাদার সঙ্গে এ হাটে ক্ষেতের সবজি বেচতে আসতাম। এখনো আসছি। আমাদের ক্ষেতের সবজি পাইকাররা কিনে ঢাকা ও ইউরোপ আমেরিকায় রপ্তানি করে।
বানারীপাড়া উপজেলার বাইশারি গ্রামের কৃষক এমাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বৈঠাকাটা ভাসমান হাট এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট। প্রতি হাটে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার কৃষিপণ্য কেনাবেচা হয়। তাই আমরা কৃষিপণ্যের ভাল দাম পাওয়ার জন্য এ হাটে আসি।
বৈঠাকাটা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল গফুর বাংলানিউজকে বলেন, এ হাটে সারা বছর কেনাবেচা হয়। তবে শীত মৌসুমে শীতকালীন শাক-সবজির পাশাপাশি নানা জাতের ফুলের চারা বিক্রি হয়। বর্ষাকালে হাটে ওঠে নানা ধরনের চারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭
জেডএম/