এরই মধ্যে গবেষণায় হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে তরমুজের আবাদ করে ব্যাপক সফলতা পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চাষাবাদ করছেন পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রের কৃষিবিজ্ঞানীরা।
কৃষিবিজ্ঞানী মোঃ রেজাউল করিম বলেন, প্লাস্টিকের পাইপে মাটিবিহীনভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণের কম্পোজিশনযুক্ত পানিতে সল্প শ্রম ও খরচে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
বিশেষ করে এই পদ্ধতিতে বরিশাল, রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনাসহ শহর অঞ্চলে যেখানে ফসলি জমি কমে যাচ্ছে সেসব স্থানে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
শহর ও নগরকেন্দ্রিক জীবনে বাড়ির আঙিনায় কিংবা ছাদে অনেকেই বাগান করে থাকেন। এজন্য তাদের ছাদে মাটি তুলতে হয়, শ্রম দিতে হয়। কিন্তু এই পদ্ধতিতে মাটি তোলার ঝামেলা নেই। সল্প জায়গা লাগে, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় থাকে। পাশাপাশি আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না, অনাবাদি জমিও চাষের আওতায় আনা যায়। আলাদাভাবে সার ও সেচের প্রয়োজন নেই।
তিনি বলেন, এখানে জায়গান অযায়ী প্লাস্টিকের পাইপ ও একটি টাইমারসহ মোটরের প্রয়োজন হয়। একবার লাগানোর পর তা বছরের পর বছর থেকে যায়। এক্ষেত্রে মাটিতে বীজ বপনের আগে ক্ষেত পরিচর্যার মতো খরচের বালাই নেই। পাশাপাশি ক্ষেতের জায়গাটি প্রটেক্টেড হওয়ায় ফসলের রোগবালাইয়ের ঝামেলাও নেই।
তিনি বলেন, দেশের মধ্যে গাজীপুরে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের গবেষণা আগে থেকে চললেও পটুয়াখালিতে গতবছরই শুরু হয়। টমেটো, করলা, ক্যাপসিকাম চাষের পর পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্রে এবছরই পরীক্ষামূলকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে তরমুজের আবাদ করেন তারা।
২০ ফুট দীর্ঘ, ১০ফুট প্রস্থের এই তরমুজ বাগানটিতে ১০ টি প্লাষ্টিকের পাইপে ছিদ্র করে ১৪০ টি বিদেশি জাতের (হাইব্রিড) দু’ধরনের তরমুজের চারা রোপন করেন তারা।
স্বাভাবিক নিয়মে ফলন এসে গাছে গাছে ঝুলেই বড় হয়েছে তরমুজ। বড়জাতের তরমুজ (১-দেড় কেজি) গাছে ১ টি ও ছোট জাতের (৬-৯ শত গ্রাম) ২ টি করে তরমুজ হয়েছে গাছগুলোতে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করে আশানরুপ ফল পাওয়ায় এ নিয়ে তারা আশাবাদী বলে জানিয়ে মোঃ রেজাউল করিম বলেন, আগস্ট মাসে স্থানীয় বাজার থেকে তরমুজ বীজ কিনে কেন্দ্রেই চারা করেন। চারার বয়স এক সপ্তাহ হওয়ার পর সেটিকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বাগানের প্লাস্টিকের পাইপে রোপন করেন। একইভাবে দ্বিতীয় দফায় জানুয়ারির প্রধমার্ধে চারা রোপন করেছেন। আর চারা যাতে না নড়ে সেজন্য ফোম দিয়ে দিয়েছেন। এরপর একটি পাম্প টাইমার দিয়ে চালিয়েছেন, যা ১০ মিনিট করে দিনে ১২বার চলে। এর মাধ্যমে পাইপের পানিতে প্রবাহ আনা হয়, এবংেউপচেপড়া পানি (ওভারফ্লো করা পানি) নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে জমা হয়।
তিনি বলেন, চারা রোপনের পর উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় ১৬টি উপাদান, যেমন পটাশিয়াম হাইড্রোজেন ফসফেট, পটাশিয়াম নাইট্রেট, ক্যালসিয়াম নাইট্রেট, ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, ইডিটিএ আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট, বোরিক এসিড, কপার সালফেট, অ্যামনিয়াম মলিবডেট ও জিংক সালফেট বিশুদ্ধ পানিতে মিশিয়ে ওই পাইপে নিয়োমিত সরবরাহ করা হয়। যা স্বল্প খরচে পাওয়া যায়। বাষ্প হওয়া ছাড়া এই কম্পোজিশন মিশ্রিত পানির কোনো অপচয় হয় না।
তিনি জানান, তরমুজের জীবনকাল ৭০-৮০ দিন, করলার ৮০ দিন, ক্যাপসিকামের ৫০-৬০ দিন, বারি-১৪ টমেটোর ১০০ দিন। নির্দিষ্ট জীবনকালের মধ্যেই হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে এগুলোর ফসল সংগ্রহ করা হয়েছে।
পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষনা কেন্দ্রে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো, মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার জানান, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে দেশে তরমুজে সাফল্য এবারই প্রথম।
বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতিতে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি চাষ বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি স্বল্প খরচে ও সল্প শ্রমে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে শাক সবজির আবাদ করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবেও সফল হতে পারেন যে কেউ।
প্রসঙ্গত, ১৮ বর্গ মিটার জায়গায় আধুনিক এই ক্ষেত তৈরিতে পাইপ, পাম্প, মিটারসহ খরচ পড়বে ২৭ হাজার ৯ শত টাকা। এরপর প্রতি বছর খরচ পড়বে মাত্র ১ হাজার টাকা। এক সিজন (৩মাস) চারা রোপন ও উপাদানে খরচ হয়েছে ৫ হাজার ৩ শত টাকা। আয় হয়েছে ১৬ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
এমএস/জেএম