কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, এটা তাপমাত্রাজনিত সমস্যা। জমিতে নিয়মিত পানি সেচ ও স্প্রে করলে ক্ষতির হাত থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
সরেজমিনে যশোরের শার্শা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, খরচ কম আর লাভ বেশি হওয়ায় গত ৫ বছরে অনান্য ফসলের আবাদ ছেড়ে চাষিদের আগ্রহ বেড়েছে আম চাষে। ফলনও ভালো হয়েছিল। তবে নতুন বছরে এ পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা না মেলায় এবং তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গাছের আম ফেটে যাচ্ছে, আবার শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। এতে একদিনে মহাজনদের দেনা পরিশোধ ও অন্যদিকে নিজেদের লোকসানের কথা ভেবে চাষিদের মাথায় হাত উঠেছে।
বেনাপোল বাজারের একজন আমের আড়তদার হযরত। এবছর তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৩০ বিঘা জমি চাষিদের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে আম গাছের পরিচর্যা করে আসছেন। এ আম নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু দিন দিন রোদের তীব্র তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তার গাছের অধিকাংশ আম ইতিমধ্যেই ঝরে পড়েছে। এতে তার দেখা সব স্বপ্ন যেন মিথ্যা হয়ে গেছে।
জানালেন, এবছর তার প্রায় ২৫ লাখ টাকার আম বিক্রির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু যে অবস্থা তাতে অর্ধেক টাকাও পাওয়া যাবে না। এতে তার বড় আকারের লোকশান হবে।
বেনাপোলের বড় আঁচড়া গ্রামের আমচাষি হোসেন মাস্টার জানান, একদিকে সার-বিজের উর্দ্ধমুখী দর, অন্যদিকে দিন দিন রোগ বালায় বাড়তে থাকায় গত ৫ বছর ধরে তিনি ধান চাষ কমিয়েছেন। কম খরচে লাভ ভালো হওয়ায় ঝুঁকে পড়েছেন আম চাষে। এবছর ৯ বিঘা জমিতে আম চাষ করেছেন। গত বছরও ভালো লাভ হয়েছিল। কিন্তু এবার বৃষ্টির অভাবে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গাছ থেকে যেভাবে আম ঝরে পড়ছে তাতে শেষ পর্যন্ত আদৌ আম টিকবে কিনা সন্দেহ।
একই এলাকার আমচাষি মেহেরের ছেলে রফিকুল বলেন, ৫ বছরের জন্য ১১ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আমের চাষ করেছি। এবছরে এখন পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা নেই। এতে খরায় আম ঝরে যে লোকসান হয়েছে তাতে মহাজনের দেনা কিভাবে মেটাবো তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।
শার্শার কায়বা ইউনিয়নের রাড়িপুকুর গ্রামের ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ শেখ। ব্যবসায় লোকসানের কারণে বাড়িতে বসা ছিলেন। এক পর্যায়ে সবার দেখা-দেখি তিনিও আম চাষ শুরু করেন। বর্তমানে ২০ বিঘা জমিতে তার বাগান রয়েছে। তীব্র খরায় তিনিও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানান।
উপজেলা কৃষি অফিসার হিরক কুমার সরকার রোববার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে আম ঝরে যাচ্ছে। জমিতে নিয়মিত পানি সেচ ও স্প্রে করলে ক্ষতির হাত থেকে কিছুটা রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া মিশিয়ে স্প্রে অথবা লুট্রাফস ২৪ নামে তরল ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০১৬
জেডএম/জেডএম