ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

সরকারি দামে মুরগির বাচ্চা পেতে খামারিদের দৌড়ঝাঁপ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
সরকারি দামে মুরগির বাচ্চা পেতে খামারিদের দৌড়ঝাঁপ ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির একদিন বয়সী বাচ্চা

ঢাকা: সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির একদিন বয়সী বাচ্চা। উচ্চ দামে একটি সংগঠন বাচ্চা বিক্রি করে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের শোষণ করছে বলেই অভিযোগ। সঠিক দামে বাচ্চা পেতে প্রান্তিক খামারিরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে ঘুরছেন দিনের পর দিন।

প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা বলছেন, উৎপাদনকারীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করে একদিনের ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির বাচ্চা বিক্রি করছেন। সরকার ঘোষিত দামের থেকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে আগের দামে ফিরতে মন্ত্রণালয়ে ১১টি সভা শেষে যে দাম নির্ধারিত হয়েছিল তাও বাস্তবায়িত হয়নি।

গত দু’বছর থেকে তারা অতিরিক্ত দামে কিনছেন একদিনের বাচ্চা।
 
বর্তমানে একদিন বয়সী একটি লেয়ার বাচ্চার মূল্য ১১০ টাকা এবং ব্রয়লার বাচ্চা ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মো. মহসিন। অথচ লেয়ার বাচ্চার মূল্য ৩৪ টাকা ও ব্রয়লার বাচ্চার স্বাভাবিক বিক্রয় মূল্য হওয়ার কথা ছিল ৩০ টাকা।
 
পোলট্রি শিল্প উন্নয়ন সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ পোলট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ সিলেট বিভাগের সভাপতি ফয়েজ রাজা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ২০১০ সালে সরকার ব্রয়লারের একদিনের বাচ্চার দাম ৩০ টাকা এবং লেয়ারের দাম নির্ধারণ করেছিল ৩২ টাকা। কিন্তু ওই দাম বহাল থাকলেও গত দু’বছর থেকে উচ্চ দামে একদিনের বাচ্চা বিক্রি করছে উৎপাদনকারীরা।
 
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ে ১১টি সভা করে দাম পুনঃনির্ধারিত হয়েছিল। সেই দাম বাস্তবায়িত হয়নি। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গেও একাধিকবার বৈঠক করেছি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নির্ধারণ দাম বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
 
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (প্রাণি সম্পদ-২) কাজী ওয়াছি উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দাম বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের একজন ডিরেক্টরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

অধিদফতরের উপপরিচালক (প্রশাসন) ড. আবুল খায়ের বাংলানিউজকে জানান, কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় এ নিয়ে তাদের সঙ্গে মিটিং হচ্ছে।
 
অধিদফতর সমাধান করতে না পারলে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে সচিবের সঙ্গে সভা করে নির্ধাররিত দাম বাস্তবায়ন চূড়ান্ত করে ফেলব বলে জানান যুগ্ম-সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন।
 
খামরিদের অভিযোগ, অনিয়ন্ত্রিতভাবে মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে বড় বড় ১০-১৫টি বাচ্চা উৎপাদনকারী দেশি-বিদেশি কোম্পানি প্রান্তিক খামারিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত চার হাজার ৯শ ৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
 
দেশের এক লাখ ২৩ হাজার ৬শ ৮৭টি পোল্ট্রি খামার থেকে প্রতিদিন দুই কোটি ৯৮ লাখ ডিম ও দুই হাজার ৯৪০ মেট্রিকটন মুরগির মাংস উৎপাদন হয় বলে জানান তারা।
 
পোলট্রি খামার নেতা মো. মহসিন বলেন, দীর্ঘদিন যাবত কেমিক্যাল যুক্ত ডিম ও মাংসের গুজবে ডিম এবং ব্রয়লার মাংসের ভোক্তা কমে যাওয়ায় প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদিত ডিম-মাংসের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।
 
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) নামের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে প্রান্তিক খামারিদের শোষণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন খামারিরা। তাদের অভিযোগ ৯০-১০০ জনের একটি গ্রুপের সংগঠনটির কয়েকজন পোল্ট্রি সেক্টরের উ‍ৎপাদনকারী, ফিড, ওষুধ বা ভ্যাক্সিন কোম্পানির মালিক। সংগঠনটি গত দু’বছরে একদিন বয়সী বাচ্চার মূল্য বাড়িয়ে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
 
মহসিন বলেন, একদিন বয়সী বাচ্চার মূল্য নির্ধারণে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ১১টি সভা হলেও শেষ পর্যন্ত লেয়ারের বাচ্চা উৎপাদন খরচ ৩৪ টাকা এবং ব্রয়লার বাচ্চার উৎপাদন খরচ ৩০ টাকা নির্ধারণ করা।
 
গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে সর্বশেষ ১১তম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২৬ ডিসেম্বর। সংশ্লিষ্ট সবার উপস্থিতিতে ওই উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে ঘোষণা হয়নি এখন পর্যন্ত।
 
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।