রংপুরেই শুধু দেড় হাজার হেক্টর জমিতে হাড়িভাঙা আমের চাষ হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। অধিদফতরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, জেলার মেট্রোপলিটন, সদর, মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলায় এই আমের সিংহভাগ আমের চাষ হচ্ছে।
রংপুর ছাড়াও গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ ও সাদুল্যাপুর উপজেলা, কুড়িগ্রামের সদর ও রাজারহাট, লালমনিরহাটের সদর ও কালিগঞ্জ এবং নীলফামারীর সদর ও সৈয়দপুরে ছড়িয়ে গেছে হাড়িভাঙার চাষ। জনপ্রিয়তার কারণে এসব জেলায় দিন দিন চাষ বাড়ছে হাড়িভাঙার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শ ম আশরাফ বাংলানিউজকে বলেন, হাড়িভাঙা রংপুরের ঐতিহ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে হাড়িভাঙার চাষ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এরমধ্যে বেশির ভাগ মিঠাপুকুর এবং বদরগঞ্জ উপজেলায়। কিছুটা সদর উপজেলায় চাষ হয়।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ফলন ভাল। কিছুটা আম পড়লেও বাগানের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়নি।
মিঠাপুকুর এবং বদরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের চাষীরা দিন দিন ঝুঁকছেন হাড়িভাঙা চাষে। অন্য আমের চাষ কমিয়ে দিয়ে এই ফলটিই এখন মুখ্য। এছাড়া অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভজনক হওয়ায় হাড়িভাঙা চাষ করছেন তারা।
স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত জাতটি এখন রংপুরের বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মাটির পাতিলে (হাড়িভাঙা) রাখা একটি আম থেকে গজিয়ে ওঠা চারা থেকে নামটি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বর্তমানে গুটি গুটি আমের বাগান পরিচর্যা করছেন কৃষক।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এই হাড়িভাঙা আমের বিশেষত্ব বর্ণনা করে জানিয়েছে, প্রতিবছর গাছে আম ধরে। আম পাকলেও শুধু বোঁটার কাছাকাছি অংশ হালকা হলুদ রঙ ধারণ করে। পুষ্ট আম শাঁস শক্ত অবস্থায় খেতে হয়। তবে বেশি পাকলে শাঁস ও আঁটির মধ্যবর্তী অংশ নরম, কালো ও দুর্গন্ধময় হয়। ফলে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মধ্য জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাড়িভাঙা আমের ফুল বা মুকুল আসে। আম পরিপক্ক হয় জুন মাসের ২০ তারিখের পর। জুনের চতুর্থ সপ্তাহ থেকে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা হয়।
ফলের গড় ওজন ২০০ থেকে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত। পুষ্ট কাঁচা আম ৪-৫ দিন এবং পাকা আম ২-৩ দিন সংরক্ষণ করা যায়।
হাড়িভাঙার গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ১১ মেট্রিক টন। আর বিঘা প্রতি দেড় মেট্রিক টন। হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ব্যয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। আর বিঘাপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
হাড়িভাঙা আমের অর্থনৈতিক গুরুত্বটাই বেশি। মৌসুমের শুরুতে বাজার দর ৮০-১০০ টাকা, মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে ৫০-৮০ টাকা এবং শেষ দিকে ৩০০-৪২৫ টাকা কেজি বিক্রি হয় হাড়িভাঙা আম। হেক্টর প্রতি আয় ৫-৬ লাখ টাকা আয় করেন কৃষকরা।
রংপুরের ঐতিহ্যবাহী এই হাড়িভাঙা আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায় মৌসুমে। বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে বাঁশের খাচা বা টুকরি ব্যবহার করা হয়। দেশের বিভিন্ন জেলায় আম পাঠাতে বাঁশের টুকরি বা খাঁচা, কাগজের কার্টন এবং প্লাস্টিকের ক্রেক ব্যবহার করেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, দেশের বাইরে কিছু পরিমাণে আম পাঠানো হয় শুধুমাত্র আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-বান্ধবদের জন্য। এ পর্যন্ত বিদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ আম পাঠানো শুরু হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৯ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৭
এমআইএইচ/এইচএ/