ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

১৬৮ কোটি টাকার মরিচ উৎপাদন যমুনার চরে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৬ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৭
১৬৮ কোটি টাকার মরিচ উৎপাদন যমুনার চরে যমুনার চরে মরিচ শুকানোর ব্যস্ততা, ছবি: আরিফ জাহান, বাংলানিউজ

বগুড়া: মো. এমদাদুল হক। বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের শোনপচা চরাঞ্চলের বাসিন্দা। পেশায় দক্ষ কৃষক; তবে সেটি নির্ভর করে যমুনার গতি-প্রকৃতির ওপর। যতক্ষণ ভয়াল ‍যমুনার পেট খালি থাকে, ততক্ষণ জারি থাকে কৃষি কাজ। আর পানিতে যমুনার পেটে ভরে গেলে নিজেকে অন্য পেশায় জড়িয়ে নেন এই মধ্যবয়সী।

সেই হিসেবে পানি শূন্য থাকাকালে গেলো রবি মৌসুমে এই কৃষক চরাঞ্চলে সাত বিঘা জমিতে লাগিয়েছিলেন ‘খ্যাতির মরিচ’। বীজ, সার, সেচ, শ্রমিক মিলিয়ে তার মোট ব্যয় হয়েছিল ১৫ হাজার টাকার মতো।

শুকনো মরিচ হিসেবে প্রতিবিঘায় ফলন হয়েছিল অন্তত ছয় মণ। প্রতিমণ মরিচ বিক্রি করেছেন ১২০০ টাকায়। হয়েছিল লাভ।

কেবল এমদাদুল হক নন, আমিনুল ইসলাম, ফরিদ হোসেন, নবীর উদ্দিন, লালু সরকারসহ চরাঞ্চলের একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা হলে এমন তথ্য উঠে আসে।
 
কৃষকরা বাংলানিউজকে জানান, চরের মানুষজন সবসময় পানি নেমে যাওয়ার প্রহর গুনতে থাকেন। পানি নেমে যাওয়া মাত্রই মরিচ চাষে নেমে পড়েন তারা। টানা ৩-৪ মাস মরিচ চাষে সময় কাটিয়ে দেন। চরের লাল টুকটুকে মরিচের খ্যাতি দেশজুড়ে।
যমুনার চরে মরিচ শুকানোর ব্যস্ততা, ছবি: আরিফ জাহান, বাংলানিউজ
এখানকার উৎপাদিত মরিচ দেশের নামিদামি অনেক কোম্পানি বা বড় বড় প্রতিষ্ঠান ক্রয় করে থাকে। প্রত্যেক বছর কৃষকরা এ সুযোগটি কাজে লাগান। এ কাজে বাড়ির নারীরাও সমানভাবে সংযুক্ত। মরিচ লাগানো, উঠানো, শুকানো ও বস্তায় ভরা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে পুরুষকে সহযোগিতা করেন নারীরা। বাড়তি আয়ের আশায় সবাই একযোগে মরিচের ক্ষেতে ব্যস্ত থাকেন। চরের মানুষের অভাব দূরে মরিচ ব্যাপক উপযোগী ফসল বলেও জানান এসব খেটে খাওয়া মানুষ।
 
গেলো রবি মৌসুমে বগুড়ার ১২টি উপজেলায় সাত হাজার হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়। এরমধ্যে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলে সিংহভাগ চাষ। শুকনো মরিচ হিসেবে প্রতি হেক্টরে ফলন হয় এক দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন হারে। এ হিসেবে গেলো মৌসুমে এ জেলায় মরিচ উৎপাদন ১২ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১৬৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
 
মঙ্গলবার (০২ মে) জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল বাংলানিউজকে এই পরিসংখ্যান দেন।
দারুণ স্বাদের লাল মরিচ, ছবি: আরিফ জাহান, বাংলানিউজ
তিনি জানান, রবি মৌসুমে মরিচের চাষকাল সাধারণত অক্টোবর থেকে মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত। চরাঞ্চলের কৃষকরা যমুনার তীরবর্তী চরের জমিতে স্থানীয় ও হাইব্রিড জাতের মরিচ চাষ করে থাকেন। মরিচ লাগানোর ৬০-৭০ দিনের মাথায় চাষিরা তা উঠানো শুরু করেন। প্রত্যেক সপ্তাহে একবার করে প্রায় তিনমাস একটানা মরিচ উঠাতে পারা যায়।
 
এই অঞ্চলের মরিচের সুনামের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গুণগত মান ভালো বলেই সুনাম বেশি। এছাড়া মরিচের ঝাঁজ ও ঝাল বেশি। রয়েছে দারুণ সুগন্ধ। অনেক বড় বড় কোম্পানি এখানকার মরিচ কেনায় বিনিয়োগ করছে বলে চাষিরা মুনাফা করছেন।
 
ওবায়দুর রহমান মন্ডল আরও জানান, চলতি খরিচ-১ মৌসুমে এ জেলায় ৭৭৫ হেক্টর জমিতে মরিচ লাগনো হয়েছে। মার্চের ১৬ তারিখ থেকে জুন পর্যন্ত কৃষক এ মৌসুমের মরিচ চাষ করবেন। সাধারণত এপ্রিলের শুরু থেকে এ মৌসুমের মরিচ উঠানো ও বাজারজাত শুরু হয়।
 
কাঁচা হিসেবে আট মেট্রিক টন হারে হেক্টর প্রতি ফলন হচ্ছে। বর্তমান মৌসুমে প্রায় ছয় হাজার ২০০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচের ফলন হবে বলে আশাবাদ কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তার।

শুকনো মরিচে ভাগ্য খুলেছে উত্তরের কৃষাণীদের

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৭
এমবিএইচ/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।