ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

ধানে পচন, উত্তরে চাষিদের হাহাকার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৭
ধানে পচন, উত্তরে চাষিদের হাহাকার ধানে পচন, উত্তরে চাষিদের হাহাকার- ছবি: বাংলানিউজ

রংপুর থেকে:  অতিবৃষ্টির কারণে ধান পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলে। পাকার আগেই ক্ষেতের পর ক্ষেত লালচে রঙ ধারণ করেছে ধানের শীষ। আক্রান্ত ক্ষেতে ধানের শীষে চালের অবশিষ্ট টুকুও নেই। ধানের এ অবস্থায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, অতিবৃষ্টির কারণে এবার ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগের প্রাদ‍ুর্ভাব দেখা দেয়।   ব্রি-২৮ জাতের ধান আক্রান্ত হয়েছে বেশি।

মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া এবং সদর উপজেলায় আক্রান্তের তথ্য দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। তবে উত্তরের অন্যান্য জেলাতেও ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করেছে বলে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে।

চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে আগাম জাত হিসেবে অন্য বছরের মত এবারও ব্রি-২৮ জাতের চাষ করেছেন কৃষকরা। কিন্তু এই জাতের ক্ষতি হয়েছে সব থেকে বেশি। ডিপ এবং শ্যালো মেশিনের খরচ, সার ও কীটনাশকের খরচ তো দূরের কথা, কোনো কোনো ক্ষেতের ধানই উঠবে না কৃষকের ঘরে।  

রংপুর সদর উপজেলার পালিচড়া, মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ, বদরগঞ্জের নাটারাম, লোহানীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে লালচে এবং কোথাও বাদামী রঙ ধারণ করেছে ধানের শীষ। পরিপক্ক হওয়ার আগেই শীষের গোড়ায় ছত্রাকের আক্রমণে পচন ধরে যায়। ফলে ধানের শীষ শুকিয়ে গেছে।  
ধানে পচন, উত্তরে চাষীদের হাহাকার- ছবি: বাংলানিউজ 
মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের চকের জমিতে দু’একটি বাদে পুরো ক্ষেতের ধানের শীষ আক্রান্ত হয়ে লালচে রং ধারণ করা নিজ জমিতে ওষুধ দিচ্ছিলেন মন্ডলপাড়ার শাহজাহান।

বলেন, “দুই-তিনদিনের মধ্যে পুরা ধানবাড়ি নষ্ট হয়া গ্যাছে। যে দুই-একটা শীষ আছে তাতে স্প্রে করছি। না হইলে খামো কী?”
 
এই ২৬ শতাংশ জমি ছাড়াও আরও দু’টি ক্ষেতের ২৮ জাতের ধান নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান শাহজাহান।  

ওই চকের অধিকাংশ জমি লালচে রঙ ধারণ করেছে। তবে অন্য জাতের দু’একটি ক্ষেতের ধান ভাল রয়েছে।

একই ইউনিয়নের পাইকপাড়ার মোজাহারুল ইসলাম বলেন, যেখানে ২৮ জাত সেখানেই মড়ক। ধানের শীষ বের হওয়ার পর পচন দেখা দেয়। ওষুধ দিয়েও কোনো লাভ নেই।

এবার কোনো কোনো ক্ষেতে কাস্তে লাগানো যাবে না বলে জানান বদরগঞ্জ উপজেলার মৌলভীপাড়ার আনসার আলী।  
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স. ম. আশরাফ আলী বাংলানিউজকে বলেন, ১৬ থেকে ২৫ মার্চ টানা বৃষ্টির কারণে ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। টানা বৃষ্টিতে ছত্রাকের বিস্তার হয়েছে বেশি।
ধানে পচন, উত্তরে চাষীদের হাহাকার- ছবি: বাংলানিউজ

এ পর্যন্ত রংপুর জেলায় ৩৩ দশমিক ২৫ হেক্টর জমি ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান স. ম. আশরাফ আলী।

জেলায় এবার এক লাখ ৩৩ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
 
মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া এবং সদর উপজেলায় ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক।
 
বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় এখন রোগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে জানিয়ে এই কৃষিবিদ ধানের জমিতে ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ৪/৫ দিন পর পর ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। আর ধান পরিপক্ক হলে অতি দ্রুত কেটে ফেললে ক্ষতি কমবে।

দীর্ঘ মেয়াদী প্রতিরোধ হিসেবে আগামীতে ২৮ জাত কমিয়ে দিয়ে অন্যান্য রেসিস্ট্যান্ট জাতের চাষ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স.ম. আশরাফ আলী।

অধিদফতরের কর্মকর্তারা মাঠে গিয়ে কৃষকদের এ সংক্রান্ত বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪১ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৭
এমআইএইচ/বিএস
 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।