ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

দুধ অবস্থায় পচে গেছে ব্রি-২৮, ঘরে উঠবে না ধান

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৯ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৭
দুধ অবস্থায় পচে গেছে ব্রি-২৮, ঘরে উঠবে না ধান দুধ অবস্থায় পচে গেছে ব্রি-২৮

রংপুর থেকে: সবুজ ক্ষেতে ধানের শীষ দেখে হাসিতে ভরা ছিল কৃষকের মুখ। কিন্তু এখন ম্লান সেই হাসি। কাঁদছেন কৃষক। মাঠের পর মাঠ পচন ধরে পুড়েছে ক্ষেত, এতে কপালও পুড়েছে কৃষকের। বন্যার পানির আগে ফসল ঘরে তোলার আশায় যারা ব্রি-২৮ জাত চাষ করেছেন, সেই সব কৃষক এখন সর্বশান্ত, দিশেহারা।

টানা বৃষ্টিতে রোগের বিস্তার, ওষুধ কাজ না করায় ব্রি-২৮ জাতের চাষিরা এবার ধান কাটতে পারবেন না। কারণ ক্ষেতে শীষ পুড়ে গেছে, চাষের খরচ না ওঠার পাশাপাশি খাবার ধানটুকুও পাবে না এসব কৃষক।


  
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, এবার এক লাখ ৩৩ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরা চাষ হয়েছে। এসব জমিতে পাঁচ লাখ ৫১ হাজার ৩২৭ মেট্রিকটন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
দুধ অবস্থায় পচে গেছে ব্রি-২৮
কিন্তু এবার বৃষ্টি বেশি হওয়ায় ব্লাস্ট রোগের প্রদুর্ভাব কৃষকের আশা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। টানা বৃষ্টিতে ক্ষেতে রোগ ধরে দু’একদিনের মধ্যে পুরো ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।  
 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক স. ম. আশরাফ আলী বাংলানিউজকে জানান, এবার মোট চাষের ৫৯ শতাংশ জমিতে ব্রি-২৮ জাত চাষ করেছেন কৃষক। এরমধ্যে ৪০ শতাংশ আগাম জাত এবং আলুর জমিতে ৬০ শতাংশ নাবী ফসল চাষ হয়েছে।

আরও জানতে পড়ুন: ধানে পচন, উত্তরে চাষিদের হাহাকার

আগাম ফসলের মধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষি অফিসের তথ্য নিয়ে বুধবার সকাল পর্যন্ত ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এ কর্মকর্তা।
 
তিনি জানান, ধান যখন দুধ অবস্থায় ছিল তখন টানা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ছত্রাকের বিস্তার হয়েছে। এসময় ওষুধ দিলেও বেশি বৃষ্টির কারণে কাজ করেনি। কারণ ব্রি-২৮ জাতের রেসিট্যান্স ক্ষমতা কম।
দুধ অবস্থায় পচে গেছে ব্রি-২৮তবে সরকারি তথ্যের থেকে মাঠ পর্যায়ের তথ্য হের ফের রয়েছে বলে মনে করেন কৃষকরা। কারণ মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ সীমান্ত এলাকার চকের ক্ষেতে শত শত জমি লাল রঙ দেখা গেছে। দু’একটি ক্ষেত ছাড়া পুরো চকের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে।
 
মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ পশ্চিমপাড়া এলাকার কৃষক মোশাররফ হোসেন পচে যাওয়া ধান কাটছিলেন সোমবার। কাটা ধানে চার ভাগের তিনভাগের বেশি নষ্ট হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।
 
তিনি বলেন, মনকে শান্তনা দেওয়ার জন্য বাড়ি নিচ্ছি ধান। পচন ধরার দু’চার দিনের মধ্যে পুরো ক্ষেত ছড়িয়ে যায়। ৭/৮ বার ওষুধ দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। তার মতো যারা ২৮‘ জাত চাষ করেছে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত।
 
গত বছর কম থাকলেও এবার ধান পচে কৃষকরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান মোশাররফ।
 
বৃষ্টি থামায় গত কয়েকদিনে আর বিস্তার করেনি জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা আশরাফ জানান, মোট ধানের ৫ শতাংশ কর্তন হয়েছে। এরমধ্যে ১০-১১ শতাংশ কর্তন হয়েছে ব্রি-২৮ জাত।
 
যেসব ব্রি-২৮ পরিপক্ক হয়েছে তা ফেলে না রেখে দ্রুত কাটার পরামর্শ দিয়েছেন এই কৃষিবিদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৯ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৭
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।