তারপরও হাল না ছেড়ে দিনভর ব্যস্ত থাকছে ফসলি ক্ষেত রক্ষায়।
খাদ্যশস্য ভাণ্ডার খ্যাত দিনাজপুরে বোরোর ক্ষেতে নেক ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ায় মাঠের পর মাঠ ধান ক্ষেতের পাতা পুড়ছে।
কৃষকরা তাই দিশেহারা। ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অর্জনও পড়েছে হুমকিতে।
দিনাজপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৭৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। জেলায় এ বছর বোরো চাষে ৬ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ মৌসুমে বোরো চাষ করতে কৃষকরা বীজ রোপন থেকে শুরু করে ধানের শীষ আসা পর্যন্ত ভালো ফলনের আশায় বেশ পরিচর্যা করে আসছিল। কিন্তু হঠাৎ গত ১৫ দিন থেকে বোরো ক্ষেতে কার্ন্টে পোকা, ন্যাদা পোকা আক্রমণ শুরু করে। এরপর হঠাৎ করেই রাতারাতি পুড়ে যেতে শুরু করে ধানের পাতা। গোড়ায় পচন ধরে সদ্য দেখা দেওয়ায় ধানের শীষ মরে যাচ্ছে। যেদিন কোনো ক্ষেতে এ সব রোগ দেখা দিচ্ছে তারপর দিন পাশের ক্ষেতটিতেও রোগটি ছড়িয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ফসলে এরকম চিত্র দেখা দেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ছে সাধারণ কৃষক। এদের মধ্যে যেসব কৃষক চড়া সুদ ও ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছে তারা ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার আউলিয়াপুর, কমলপুর, আশঙ্করপুর, উথরাইল, বিরল উপজেলার বিজোড়া, পলাশবাড়ী, মাধবমাটি, ধুকুরঝাড়ী, কাশিডাঙ্গা ও চিরিরবন্দর উপজেলার পুনট্রি, রানীরবন্দর, আব্দুলপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নেক ব্লাস্টে পুড়ে গেছে মাঠের পর মাঠ ধান ক্ষেত।
দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের কৃষক মো. ফারুক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গত ১৫ দিন থেকে হঠাৎ ফসলি জমিতে পাতা পুড়তে শুরু করে। এরপর গোড়ায় পচন ধরে মরতে থাকে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শে বালাই নাশক প্রয়োগ করেও কোনো প্রতিকার পাই না। এ রোগ দেখা দেওয়ায় অধিকাংশ ধানের শীষ দানাশূন্য হয়ে পড়েছে।
এ কারণেই যেখানে বিঘা প্রতি ধান উৎপাদন হতো ৫০ মণ বা তার বেশি, এবার ১০ থেকে ১৫ মণ পাওয়াও মুশকিল হবে। চলতি মৌসুমে আমি সাত বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছি। বর্তমানে আমার অধিকাংশ ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। ‘ঋণ মহাজন’ করে এবার চাষাবাদ করেছি। এ অবস্থায় কীভাবে ঋণ শোধ করবো জানি না। বড়বাড়ি এলাকার কৃষক সালেহা বেগম বলেন, আমার ক্ষেতের ধান পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। চড়া সুদে ঋণ নিয়েছি। এখন সেই ঋণ কিভাবে শোধ করবো? সন্তানদের লেখাপড়ার খরচইবা কিভাবে জোগাড় করবো?
স্থানীয় কৃষি বিভাগ সঠিক সময় সহায়তা করলে হয়তো ফসলটা রক্ষা করা যেতো বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, গত মাসের শেষ দুই সপ্তাহের টানা বর্ষণে গাছে ছেটানো বালাই নাশক ধুয়ে পড়ে যায়। আর একারণেই ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। তবে এ রোগ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যরা সহযোগিতায় কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে। কৃষকের ফসল রক্ষার্থে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৭
আরআইএস/জেডএম