এবার ফসলের দাম ভাল। তাই কষ্টের পুরোটাই সুদে-আসলে ওঠে এসেছে।
সব খরচ বাদে প্রতি বিঘায় প্রায় ৪৫০০-৫০০০ টাকা হারে লাভ হচ্ছে কৃষকদের। তবে বর্গাচাষির ক্ষেত্রে লাভের পরিমাণটা কম।
ফসলের খেত ঘুরে দেখা গেছে, ভ্যাপসা গরম। আকাশে চলছে সাদা-কালো মেঘের লুকোচুরি। কখনো বা কালো মেঘের ঘনঘটা। অথবা তুমুল বৃষ্টি। এসবের মাঝেই পাল্লা দিয়ে চলছে ধানকাটার কাজ। কাকডাকা ভোরে কৃষক শ্রমিক নিয়ে খেতে ছুটে যাচ্ছেন। শ্রমিকরা খেতের এক পাশে দলবেধে বসে পড়ছেন কাস্তে হাতে। এলোমেলো ধানের গোড়ায় চালিয়ে যাচ্ছেন কাস্তে।
কাটা শেষে আটি বেঁধে ধান ভাড়ে অথবা মাথায় করে খেতের আইল ধরে ছুটছেন গৃহস্থের বাড়ির দিকে। এরপর ‘ভুত’ মেশিনে চলছে মাড়াইয়ের কাজ। ভোর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত পাড়া-মহল্লায় ও গ্রামে গ্রামে চলছে কৃষাণ-কৃষাণীর এ কর্মযজ্ঞ।
একনজরে বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ
উপকরণ:
১। বীজ/চারা ৩০০টাকা
২। ইউরিয়া সার ৮০০টাকা
৩। ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ৪৫০টাকা
৪। মিউরেট অফ পটাশ (এমওপি) ৪০০টাকা
৫। দস্তা সার ২৪০টাকা
৬। জিপসাম ১৫০টাকা
৭। গোবর সার ৫০০টাকা
৮। কীটনাশক/রোগনাশক ১১০০টাকা
৯। সেচ ২২০০টাকা
১০। উপকরণ বাবদ মোট খরচ ৬১৪০টাকা
শ্রমিক (নিজ শ্রমসহ):
১। বীজতলা তৈরি ১০০টাকা
২। জমি তৈরি ৮০০টাকা
৩। বীজ/চারা রোপন ৬০০টাকা
৪। সার প্রয়োগ ৩০০টাকা
৫। নিড়ানি ২০০টাকা
৬। পানি ব্যবস্থাপনা ২০০টাকা
৭। বালাইনাশক ১০০টাকা
৮। শস্য কাটা ও পরিবহন ৩০০০টাকা
৯। মাড়াই ও শুকানো ৫০০টাকা
১০। জমির লিজ (বর্গা) ৫০০০টাকা
১১। শ্রমিক বাবদ মোট খরচ ১০,৮০০টাকা
ছকে প্রতিবিঘা জমির বিপরীতে কৃষকের দেওয়া খরচের হিসেব। এ হিসেব অনুযায়ী এক বিঘা জমিতে সর্বোমোট উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৯৪০টাকা। বর্গা বাবদ ব্যয় বাদ দিলে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৯৪০টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের হর্টিকালচার সেন্টারের ডেপুটি ডিরেক্টর আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবিঘা বোরোর জমিতে সর্বোমোট উৎপাদন খরচ হয় সাড়ে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তবে বাজার ভাল থাকায় কৃষক তার উৎপাদিত ধানের দাম ভাল পাচ্ছেন। এতে প্রতিকূল পরিস্থিতির পরও কৃষক লাভবান হচ্ছেন।
হয়দার আলী, জহুরুল ইসলাম, লিটন, ইকবাল হোসেনসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে জানান, বিগত কয়েক বছর তারা মার খেয়েছেন দামে। এবার ধানের ভাল দাম পাচ্ছেন। আবহাওয়া যদিও তাদের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দাম বেশি পাওয়ায় ভাল আছেন তারা।
জেলায় এখন পর্যন্ত মিনিকেট জাতের ধান বেশি কাটা পড়ছে। পাশাপাশি কিছু কাটা পড়েছে পাইজাম ও কাজললতা ধান। গড়ে বিঘাপ্রতি ২০ মণের কাছাকাছি ফলন হয়েছে।
বাজারে প্রতিমণ মিনিকেট কাঁচা ধান ৮৪০-৮৬০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্য জাতের ধান ৮৮০টাকা থেকে ৯শ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
তবে এসব ধান শুকিয়ে বিক্রি করা গেলে আরো বেশি দাম পাওয়া যেত। কিন্তু বৃষ্টি বাগড়া বসালে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি বিধায় সে ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না কৃষকরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৬ ঘণ্টা, মে ০৪, ২০১৭
ইইউডি/আরএ