এ খাতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশও সমৃদ্ধ হবে- এমনটাই আশা সংশ্লিষ্টদের।
বাংলাদেশে সত্তরের দশক থেকে চিংড়ির চাষ হলেও আজ পর্যন্ত চাষ পদ্ধতিতে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
ফলে চিংড়ি উৎপাদনের হারও কমে গেছে ব্যাপক পরিমাণে। অথচ চিংড়ি চাষে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা শুরু থেকেই রয়েছে।
সবচেয়ে বেশি ভাইরাস আক্রমণের শিকার হয় বাগদা চিংড়ি বা লোনা পানির চিংড়ি। হোয়াইট স্পট সিন্ড্রম ভাইরাসে সৃষ্ট বাগদা চিংড়ির হোয়াইট স্পট রোগের মাত্রা সাম্প্রতিককালে ব্যাপক হারে বেড়েছে।
এ রোগে আক্রান্ত চিংড়ির খোলসের ওপরে সাদা সাদা ফোটার সৃষ্টি হয়। আস্তে আস্তে তা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে চিংড়ি মারা যায়। রোগটি একবার কোনো একটি চিংড়িতে রোগ দেখা দিলে তা পুরো ঘেরে ছড়িয়ে পড়ে। এ মড়কে চিংড়ির পোনা পাওয়াও সম্ভব হয় না। এর ফলে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন চাষিরা।
সম্প্রতি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বাগদা চিংড়ির পোনার ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। এ সংকট দূর করে চিংড়ি চাষ শিল্পের সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
রাজধানীতে চলমান ‘জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৭’- এর মৎস্য মেলায় চলছে এ ধরনেরই একটি সফলতার প্রদর্শনী। বেসরকারি সংস্থা সোলিডারিদাদের স্টলের অ্যাকুরিয়ামে প্রদর্শিত হচ্ছে নব উদ্ভাবিত এসপিএলপিএফ জাতের চিংড়ি ও পোনা। নতুন এ জাতের চিংড়ি হোয়াইট স্পট রোগসহ অন্যান্য ভাইরাস প্রতিরোধক বলে জানিয়েছেন স্টলের কর্মীরা।
রোববার (২৩ জুলাই) সোলিডারিদাদের স্টলে সংস্থাটির অ্যাকুয়া কালচারের টেকনিক্যাল অফিসার পঙ্কজ কুণ্ডু বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর ও নড়াইল জেলার প্রায় ২৯ হাজার চিংড়িচাষিসহ ৫০০টি প্রডিউসার গ্রুপকে নিয়ে কাজ করি। এর মধ্যে ২৬৩টি বাগদা প্রডিউসার গ্রুপ রয়েছে। গত বছর আমরা এ জাতটি উদ্ভাবন করেছি। এ পর্যন্ত কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি। সফলতার সঙ্গেই জাতটির পোনা থেকে চিংড়ি উৎপাদন করে দেশের বাইরে রফতানি করছি’।
তিনি বলেন, ‘সাধারণত চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে ঘের বা চাষের জন্য তৈরি পুকুরের গভীরতা ৩-৪ ফুট প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ ঘেরেই তা নেই। তা সত্ত্বেও জাতটি ইতোমধ্যেই দ্রুত বর্ধনশীল চিংড়ি হিসেবে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। চিংড়ি চাষের নেট নার্সারি করতে দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণও দিয়ে যাচ্ছি আমরা। কেননা, নেট নার্সারি না করা হলে এক হাজারে ২০০-৩০০টি চিংড়ির পোনা বাচে। কিন্তু নেট নার্সারিতে ৫০০-৬০০টি চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব হয়’।
যশোরের অভয়নগরের চিংড়িচাষি শহীদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাতক্ষীরায় আমার বাগদা চিংড়ির ঘের আছে। কিন্তু ভাইরাসের কারণে সব চিংড়ি মারা যেতো। তাই ক্ষতির কারণে গত দুই বছর ধরে ঘের ও ব্যবসা বন্ধ ছিল। এ বছর এসপিএলপিএফ চিংড়ির জাতটি দিয়ে আবার শুরু করেছি। এ পর্যন্ত কোনো ভাইরাস জনিত রোগে চিংড়ি আক্রান্ত হয়নি। আশা করছি, আবার আগের চেয়ে বেশি লাভে চিংড়ি উৎপাদন ও বিক্রি করতে পারবো’।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
এমএএম/এএসআর