উত্তরের পশুর হাটে এক সময় ভারতীয় গরু ছাড়া কোরবানির বাজারই কল্পনা করা যেত না। কারণ দিন বদলের পালে বাতাস দিয়েছে দেশি জাতের গৃহপালিত পশুই।
তবে অসময়ে ভারতীয় গরু আসতে শুরু হওয়ায় চাহিদামত দাম পাচ্ছেন না দেশি গরুর মালিকরা। তাই হাটে ভিনদেশি গরুর উপস্থিতিতে মাথায় হাত পড়ার দশা হয়েছে দেশি গরুর ব্যবসায়ীদের। শুক্রবার রাজশাহীর সিটিহাটে গিয়ে ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমনি চিত্র।
এদিকে, বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে এবার ঈদের মৌসুম শুরু থেকেই ক্রেতাদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম ছিলো। যে কারণে এতোদিন বেচা-কেনা জমে না ওঠায় কোরবানির পশুর দামও কমেনি। এক সপ্তাহ সময় হাতে নিয়ে শেষ সময়ে হাটে ক্রেতাদের সমাগম বেড়েছে। তাই চড়া দাম নিয়ে আর গোঁ ধরা নয়, এখন মোটামুটি লাভ হলেই পশু ছেড়ে দিবেন বলেও জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
রাজশাহীর বৃহত্তর পশু হাট হচ্ছে ‘সিটি হাট’। এখানে আসা পবার তেবাড়িয়া গ্রামের খামারি গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, হঠাৎ এ সপ্তাহে রাজশাহীর সিটি হাটে ভারতীয় গরুর আমদানি বেড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্থানীয় খামারিরাও হাটে প্রচুর সংখ্যক দেশি গরু তুলেছেন। বর্তমানে হাটে ভারতীয় গরু থাকলেও দেশি গরু কেনার দিকেই ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি।
কিন্তু ভারতীয় গরুর কারণে তার আশানুরূপ দাম হাঁকতে পারছেন না। ভারতীয় গরু এখন তেমন বিক্রি না হলেও তাদের লাভের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন গোলাম মোস্তফা। তাই ভিনদেশি গরু এবার দেশি খামারিদের ভাত মারছে বলেও মন্তব্য করেন দেশি গরুর এ খামারি।
তবে সিটি হাটে কোরবানির গরু কিনতে আসা গোরহাঙা এলাকার আকবর আলী বলেন, দেশি গরু বেশি থাকলেও দাম বেশি। ছোট আকারের গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা, মাঝারি গরু ৫০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা। ৮০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ পর্যন্ত চাচ্ছে বড় সাইজের গরু।
গরুর পাশাপাশি ছাগলের দামও চড়া। হাটে ছোট সাইজের ছাগল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের ছাগল ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা ও বড় সাইজের ছাগল ২২ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারা পশু কিনে এখনও সুবিধা করতে পারছেন না বলে জানান এ ক্রেতা।
এদিকে, মৌসুমের শেষ শুক্রবারে কেবল সাধারণ ক্রেতারাই নন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররাও এসে ভিড় করেছেন রাজশাহীর সর্ববৃহৎ এ পশু হাটে। হাট ইজারাদাররা বলছেন, শুক্রবার থেকে কোরবানির হাট পুরোপুরি জমে ওঠেছে। সকাল থেকেই পশুর আমদানি প্রচুর। বেচা-কেনাও বেশ ভালো।
রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বাংলানিউজকে বলেন, ভারতীয় গরু থাকলেও এবার দেশি গরুর চাহিদাই বেশি। গেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি গরুর সরবরাহও বেড়েছে। ফলে দেরিতে হলেও কোরবানির পশুর হাট জমজমাট হয়ে ওঠেছে। বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, সিলেট ও পাবনার সিরাজগঞ্জ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা সিটি হাট থেকে পাইকারি হিসাবে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়।
আতিকুর রহমান জানান, এখন কোরবানির পশুর দাম কিছুটা চড়া থাকলেও ২/৩ দিনের মধ্যে সরবরাহ আরও বাড়বে। তখন দামও কমে যাবে। কারণ পশু ধরে রাখার মত এবছর আর সময় হাতে নেই। এখন গরু বিক্রি করতে না পারলে খামারি ও ব্যবসায়িরাই ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাই অল্প লাভ হলেও কোরবানির পশু বিক্রি করে দিবেন তারা। এতে সাধারণ ক্রেতারাই শেষ পর্যন্ত লাভবান হবেন। রোববারের মধ্যে হাটে মানুষের ঢল নামবে বলেও জানান এ হাট ইজারাদার।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৭
এসএস/ওএইচ/