আজিজুলের এ অনন্য সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারই পরামর্শমতো কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও সৈয়দপুরে মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন আরও অনেকেই।
উপজেলা শহরের টেকনিক্যাল কলেজপাড়ায় ২০০৮ সালে দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ঔষধি গ্যানো মাশরুম উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ।
এক একর জমির মাশরুম কেন্দ্রটির ল্যাব, কালচার হাউস ও ওয়ার্কশপে গ্যানো মাশরুমের টিস্যু কালচার, মাদার কালচার, প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত করে সারাদেশে বাজারজাত করা হয়।
প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১৫০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে, যার ৫০ জন নারী-পুরুষকে সরেজমিনে গ্লোভস্ পরে কর্মরত দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী আজিজুল হক জানান, উৎপাদিত গ্যানো মাশরুম নিজস্ব ল্যাবে প্রক্রিয়াজাতের পর ক্যাপসুল ও বিভিন্নভাবে প্যাকেটজাত করে এফ গ্যানো জেনারেল, এফ গ্যানো এম, গ্যানো চা, এফ মাশরুম, এফ গ্যানো তেল, ফেসিয়াল ফেসপ্যাক নামে বাজারজাত করেন তারা। অনেক প্রবাসীও দেশে এসে নিজের ও পরিবারের অন্য আত্মীয়-স্বজনের প্রয়োজনে বিদেশে নিয়ে যান।
তার দাবি, সরকার আর্থিক সহযোগিতা করলে অবকাঠামো ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সংযোজনে প্রতিষ্ঠানটিকে আন্তর্জাতিক মানের করা সম্ভব। দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশে গ্যানো মাশরুম রফতানি করা সম্ভব।
শহরের বাঙালিপুর নিজপাড়ার আজগার আলী জানান, অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় অনেক টাকা-পয়সা খরচ করেছেন তিনি। ভালো না হওয়ায় চিকিৎসার আশাই ছেড়ে দেন। অবশেষে ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের গ্যানো মাশরুম সেবনে এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সৈয়দপুর সেনানিবাসের সাবেক বেসামরিক কর্মকর্তা শফিকুর রহমান জানান, ঘাড় বাঁকা ও শক্ত হয়ে যাওয়ায় তার চলাফেরায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছিল। দেশে ও ভারতে চিকিৎসা করেও উন্নতি না হওয়ায় বেঁচে থাকার আশাই ছেড়ে দেন। মাশরুমের উপকারিতা জেনে আজিজুল হকের কাছে গেলে গ্যানো মাশরুম খাওয়া ও শারীরিক ব্যায়ামের পরামর্শ দেন তিনি। এতেই আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠেন।
যুগোপযোগী এ মাশরুম উৎপাদন কেন্দ্রটি ইতোমধ্যে পরিদর্শন করেছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) ফজলে ওয়াহেদ খন্দকার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, হর্টি কালচার উইংয়ের পরিচালক কুদরত-এ-গণি, হাজি দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সাইফুল হুদার নেতৃত্বে কৃষি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক সনদ পেয়েছে ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ। এর মধ্যে বাংলাদেশে মাশরুম উৎপাদনে সফলতা, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ, সম্প্রসারণ, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, পুষ্টি পূরণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪১৮’ অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও দেশের শ্রেষ্ঠ মাশরুম উৎপাদক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ একাডেমি অব অ্যাগ্রিকালচার অ্যাওয়ার্ড, সিটি অ্যাওয়ার্ড, স্টার অ্যাওয়ার্ড, তানজিন কালচারাল ফাউন্ডেশন সম্মাননাসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের বহু পুরস্কার ও সুনাম অর্জন করেছে।
মাশরুম ইন্সটিটিউটের উপ-পরিচালক ড. নিরোদ চন্দ্র সরকার বলেন, গ্যানো মাশরুম মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি নিয়মিত সেবনে টিউমার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডেঙ্গু, এইচআইভি, ক্যান্সার, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, আমাশয়সহ কিডনি ও যকৃতের বহু রোগ প্রতিরোধ, নিরাময় বা নিয়ন্ত্রণ করে।
বাংলাদেশ সময়: ০১১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৭
এএসআর