তবে চলতি বছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকরা অনেকটা দিশেহারা পড়েছিলো। রোপা-আমন ও রোপা-আউশ মৌসুমের ধানের খেত প্রথমদফা বন্যায় আক্রান্ত হয় জুলাই মাসে।
তবু প্রকৃতির কাছে হার মেনে নেয়নি এ জেলার কৃষকরা। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোদমে জমিতে নেমে পড়েন তারা। জমিতে নতুন করে ফসল ফলান।
হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে যান কৃষকরা। চোখের সমানেই তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে জমির ধান। এখন সোনারঙা সেই ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন তারা। সবমিলে যেন বাঁধার পাহাড় ডিঙিয়ে ধানেই কৃষকের চোখে-মুখে ফুটে উঠছে হাসি!
বগুড়া জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে কৃষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হলে এমনই তথ্য ওঠে আসে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কেবলই সবুজের সমারোহ দৃশ্যমান। ধান গাছের ডগায় থোকায় থোকায় পুষ্ট ধান ঝুলছে। ধানের শীষে অনেক ধান ইতোমধ্যেই সোনারঙা ধারণ করেছে। অনেক ধান পুষ্ট হলেও এখনো কাঁচা রয়েছে। আর যেসব খেতের ধানে শীষ আসা শুরু হয়েছে তা পরিচর্যায় কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। পোকামাড় দমনে কীটনাশক স্প্রে করছেন। ধান নিয়ে গ্রামীণ জনপদগুলোয় কৃষকদের এক ধরনের কর্মযজ্ঞতা চলছে।
শহিদুল ইসলাম, গোলাম রব্বানী, আবু সাঈদসহ একাধিক কৃষক বাংলানিউজকে বলেন, এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় তাদের ওপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। এরপর দমে যাননি তারা। হাত গুটিয়ে বসে থাকেন নি। বন্যার পানি নেমে যাওয়া মাত্র যা ছিল তাই নিয়ে জমিতে নেমেছেন। সে অনুযায়ি ফল পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
ইতোমধ্যেই বাজারে রোপা-আমনে মৌসুমের ধান ওঠা শুরু করেছে। এসব কাঁচা ধানই বাজারে প্রতিমণ ৯শ’থেকে ১ হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। ধানের এমন দাম তাদের মতো কৃষকদের ব্যাপক আশাবাদী করে তুলেছে বলে মন্তব্য এসব কৃষকদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, চলতি রোপা-আমন মৌসুমে দু’দফা বন্যার পরও এ জেলায় ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে ব্রি ধান -৪৯, ব্রি ধান -৫৮, মিনিকেট, ব্রি ধান -৩৩, বিনা -৭ জাতের ধান অন্যতম।
তিনি বলেন, চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৬৫৬ মেট্রিকটন। ইতোমধ্যেই ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ জেলায় বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) পর্যন্ত শতকরা ২ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। ফলন হয়েছে ১৫-১৬ মণ হারে। এসব ধান আগাম জাতের।
কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল আরও বলেন, সময়ের ব্যবধানে খেতের ধান তরতর করে বেড়ে উঠছে। যত্ম ও পরিচর্যায় কোনো খামতি রাখছেন না কৃষকরা। রোগ বালাইয়ের আক্রমণ এখনো পর্যন্ত অনেক কম।
আর মাত্র ১৫দিন পার হলেই এ জেলায় ব্যাপক হারে ধানকাটা শুরু হবে। সবমিলে চলতি মৌসুমে ধানে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৭
এমবিএইচ/জিপি