স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ছাড়াও দূরের পাইকাররাও সওদা করতে আসছেন এসব হাটে। মুহূর্তে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার সুপারি।
তারপর ট্রাকে ভরে সুপারির বস্তা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন বিক্রয় কেন্দ্রে। পুরো আয়োজনে তাই শত শত চাষি, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে প্রতিদিন।
অনেকটা বিনা খরচ ও বিনা পরিচর্যায় উৎপাদিত হয় বলে সুপারি চাষে এমনিতেই আগ্রহ থাকে কৃষকের। তারওপর চলতি মৌসুমের বাম্পার ফলন কৃষকের খুশি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
সুপারি চাষি আজগর আলী বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর বরিশাল বিভাগের এ অঞ্চলে সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। সুপারির আকারও অনেক ভালো। তেমন কোনো খরচ বা পরিচর্যা ছাড়াই সুপারির এমন বাম্বার ফলনে স্থানীয় চাষিরা বেশ খুশি। এবার সুপারির দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।
সাতুরিয়া এলাকার ফয়েজ হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, এমনিতে একবার সুপারি গাছ ফলন দেওয়া শুরু করলে কয়েকযুগ ধরে তা অব্যাহত থাকে। তবে বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর সুপারির ফলন কয়েকগুণ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এমনটা হয়েছে।
তিনি জানান, এরই মধ্যে ৫০ হাজার টাকার সুপারি বিক্রি করেছেন। আরও ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার সুপারি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। এ জন্য গাছ থেকে সুপারি পাড়া আর হাটে নিয়ে যাওয়া ছাড়া তেমন কোনো খরচই বহন করতে হবে না তাকে।
এদিকে পাইকাররা জানান, বরিশালের পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলার বেশ কিছু উপজেলায় এবার ভালো ফলন হওয়ায় স্থানীয় হাটগুলোতে প্রচুর সুপারি আমদানি হচ্ছে। আবার এবার সুপারির সাইজ ভালো হওয়ায় দামও ভালো উঠছে। প্রতি কুড়ি (২১০টিতে এক কুড়ি) সুপারি বিক্রি হচ্ছে ২শ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকায়।
পাইকারি ব্যবসায়ী জুয়েল তালুকদার বাংলানিউজকে জানান, পিরোজপুর ও ঝালকাঠির বিভিন্ন হাট থেকে প্রায় প্রতিদিনই সুপারি কিনছেন। কিছু স্থানীয় বাজারের জন্য মজুদ করছেন আর কিছু দেশের বিভিন্ন স্থানের আড়তদারদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে তার বেশ ভালো লাভ থাকবে।
তিনি আরো জানান, অনেক বড় পাইকার তো হাটের অপেক্ষায়ও থাকেন না, বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে বাগান থেকেই সরাসরি সুপরি কিনে নিয়ে যান।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা শ্যামল কুমার দাস বাংলানিউজকে বলেন, জেলায় চলতি মৌসুমে এক হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে। আশা করি এ বছর হেক্টর প্রতি ৩ থেকে ৪ টন সুপারি ফলনের লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করা যাবে। পাশাপাশি লাভজনক হওয়ায় এ ফসল গ্রামীণ অর্থনীতিতে বেশ ভালো অবদান রাখছে।
তিনি বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেবে, দিন দিন উৎপাদন বাড়ায় এ অঞ্চলের কৃষক সুপারি চাষের দিকে আগের চেয়ে অনেকটাই বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পাশাপাশি সুপারি বাগানে কোনো ঝক্কি-ঝামেলা ছড়াই লেবু, হলুদসহ বিভিন্ন ফসলও চাষ করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৭
এমএস/জিপি/জেডএম