কৃষকরা জানান, গত দুই বছর টানা বৃষ্টিতে অকালে গাছ মরে যাওয়ায় বেগুনে কিছুটা লোকসান গুণতে হলেও এ বছর তা পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন তারা।
গত সপ্তাহে তারা প্রতি মণ বেগুন বিক্রি করেছেন ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায়।
কৃষি বিভাগও বলছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের পাশাপাশি চাহিদা ও দাম বাড়ায় বেশ লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। গত দুই বছরের ক্ষতি এবার পুষিয়েও নিতে পারছেন।
লালমনিরহাটের সবজি এলাকা খ্যাত আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে মাঠের পর মাঠ সবজি ক্ষেত দেখা গেছে। এর মধ্যে বেগুনই বেশি। এ বছর চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রিতে যেমন ঝামেলা নেই, মুনাফাও তেমনি অনেক বেশি। বেগুনের গুণে তাই হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে। তাদের পাশাপাশি কাজে ব্যস্ত দিনমজুর কৃষিশ্রমিকরাও।
এলাকার ব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকেই কিনে সারা দেশে বিক্রি করছেন। সারা দিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেগুন কিনে ট্রাকে ভরে রাতেই বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। পরদিন সকালে টাটকা বিক্রি করে ওই ট্রাকেই টাকা পাঠাচ্ছেন সেসব জায়গার ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বেগুন চাষে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি এ জনপদের মানুষের আয়ও বেড়েছে। ভাগ্যের পরিবর্তনও করে নিয়েছেন অনেকেই। কিছুদিন আগেও যাদের পেটের ভাত জোটানো নিয়ে চিন্তা ছিল, তারাও এখন সচ্ছল। পাল্টে গেছে জীবন-যাত্রার মানও।
বড় কমলাবাড়ি গ্রামের বেগুনচাষি আব্দুল গনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত বছর দুই একর জমিতে চাষ করেছিলাম। কিন্ত ঘনবৃষ্টিতে গাছ মরে যাওয়ায় তেমন লাভবান হতে পারিনি। এ বছর ৪০/৪৫ হাজার টাকা খরচে এক একর জমিতে চাষ করেছি। বর্তমানে ক্ষেতেই বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১৫০০-১৭০০ টাকা দরে। প্রতি সপ্তাহে ২০/২৫ মণ বেগুন বিক্রি করে ২৫/৩০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে’।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষাধিক টাকার বেগুন বিক্রির আশাও তার।
ভেলাবাড়ি হাজিগঞ্জ এলাকার চাষি দেলোয়ার মাস্টার বাংলানিউজকে জানান, পানি জমে না- এমন উঁচু জমিতে বেগুনের চারা রোপণ করতে হয়। এরপর সার-কীটনাশক প্রয়োগ ও পরিচর্যা করলে আগাম জাতের বেগুনে লাভবান হওয়া যায়। বাজারে চাহিদা থাকায় বেশ মুনাফা আসছে এ বছর।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সারাদিন ক্ষেত থেকে বেগুন কিনে ট্রাকে ভরে রাতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পাঠাই। পরদিন সকালে বেগুন বিক্রি হয়ে ট্রাকচালকের মাধ্যমেই টাকা চলে আসে। কোনো ঝামেলা ছাড়াই কয়েক বছর ধরে এ ব্যবসা করছি’।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এ বছর ১১০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের বেগুনের চাষ হয়েছে। মৌসুম চলমান থাকায় রোপণ চলবে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত। গত বছর এ জেলার এক হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে চাষ করে ২৬ হাজার ৪৬০ মেট্রিকটন বেগুন উৎপাদিত হয়েছে।
অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিধূ ভুষণ রায় বাংলানিউজকে জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আগাম জাতের বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে চাহিদা থাকায় বেশ মুনাফা পাচ্ছেন জেলার বেগুনচাষিরা।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৭
এএসআর