ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ভেষজ বিপ্লবের বাধা মধ্যস্বত্বভোগীরা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
ভেষজ বিপ্লবের বাধা মধ্যস্বত্বভোগীরা! ঔষধি গ্রামে ভেষজ চাষাবাদ সম্প্রসারণ ও বিপণনে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। ছবি: বাংলানিউজ

নাটোর: ‘ঔষধি গ্রাম’ খ্যাত নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া গ্রামে ভেষজ চাষাবাদ সম্প্রসারণ ও বিপণনে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। দু’টি ভেষজ পণ্য উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি এবং ভেষজ গোডাউন কাম অফিস স্থাপনসহ এ লক্ষ্যে গ্রামের মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে ভেষজ উদ্ভিদ বিক্রির অন্তত অর্ধশত স্থায়ী আয়ুর্বেদিক দোকান ও দু’টি ভেষজ কাঁচাপণ্যের আড়ত।

তবে সব উদ্যোগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা দেশি-বিদেশি ক্রেতা কোম্পানিগুলোকে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে দেন না।

ফলে কোম্পানির দেওয়া ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভেষজচাষিরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়াসহ একই ইউনিয়নের আরও কয়েকটি এবং পাশের বড়হরিশপুর ইউনিয়নের কয়েকটি মিলে মোট ২০টির মতো গ্রামে ভেষজ বিপ্লবে সহায়তা করছে লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন ঔষধি গ্রাম সমবায় সমিতি ও হাজিগঞ্জ সমবায় সমিতি। মূল সংগঠন লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন ঔষধি গ্রাম সংগঠনের নেতৃত্বে সমিতি দু’টির ৩৭০ থেকে ৩৮০ জন সদস্যসহ ক্রেতা-বিক্রেতা আর উৎপাদনকারীর সমন্বয়ে জমে উঠেছে ভেষজ পণ্যের বিশাল বাজার।

মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে ভেষজ উদ্ভিদ বিক্রির অন্তত অর্ধশত স্থায়ী দোকানও।  ছবি: বাংলানিউজআড়ত দু’টির অন্তত ২৫ জন আড়তদার ও  আয়ুর্বেদিক দোকানগুলোর বিক্রেতারা প্রতিদিন দুই ট্রাক করে অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী এবং প্রায় ১৫ মণ করে অন্যান্য ভেষজ গাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন।  

গ্রামবাসী জানান, ভেষজ উদ্ভিদকে কেন্দ্র করে ওই ২০ গ্রামের কৃষক, ভ্যানচালক, কৃষিশ্রমিক, নারীশ্রমিক ও আড়ত শ্রমিকসহ প্রায় ৬ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

কৃষক আইয়ুব আলী জানান, ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ী-ক্রেতারা এসব গাছ ও ভেষজ পণ্য কিনে নিয়ে যান। এলাকার অনেকেও ফেরি করে বিক্রি করেন। স্কয়ার, হামদর্দ, সিনজেনটা ও এসবি ল্যাবরেটরিজের মতো প্রতিষ্ঠানও এখান থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে।

সংগঠনের সদস্য মোতালেব হোসেন মনে করেন, দেশের আয়ুর্বেদিক কোম্পানিগুলো সরাসরি ভেষজগুলো সংগ্রহ করলে কৃষকরা লাভবান হতেন। তার অভিযোগ, মধ্যস্বত্বভোগীরা কোম্পানিগুলোকে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে না দেওয়ায় ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

কৃষক রজব আলী জানান, ঔষধি গাছ প্রক্রিয়াজাত করে আমিরগঞ্জ বাজারের কয়েকটি আয়ুর্বেদিক দোকানে প্যাকেটজাত ওষুধ বিক্রি ও দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।

সমিতির উপকারভোগী সদস্য রফিক উদ্দিন জানান, আগে উৎপাদিত ভেষজ বাজারজাত করতে তাদের নানামুখী সমস্যা হতো। ক্রেতা পাওয়া যেতো না। রাস্তায় বিক্রি করতে গেলে পুলিশ বাধা দিতো। পরে সমিতির মাধ্যমে উদ্যোগ নিয়ে ঘরে বসেই বিক্রির ব্যবস্থা করাসহ সকল সমস্যার সমাধান হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন ঔষধি গ্রাম সংগঠনের সভাপতি মো. আব্দুর রশীদ শেখ জানান, কৃষকদের চাষাবাদ, সম্প্রসারণ, বাজারজাত, প্রক্রিয়াজাতকরণ, কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগসহ কৃষকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করছেন তারা।

এখান থেকে মাসে অন্তত ৬০ ট্রাক ভেষজ উদ্ভিদ কোম্পানিসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। আড়ত ও স্থায়ী বাজার গড়ে ওঠায় সুফল পাচ্ছেন কৃষকরা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও পর্যাপ্ত ঋণ সহায়তা পেলে ঔষধি গাছের চাষ আরো বাড়ানো সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।

আয়ুর্বেদিক দোকানে প্যাকেটজাত ভেষজ ওষুধ বিক্রি ও দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।  ছবি: বাংলানিউজউপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঔষধির চাষাবাদ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতসহ বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়াতে সমিতির ৩৭০ জন সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১৮ জন কৃষককে সমাজসেবা বিভাগের মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই সাভার পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং সেন্টারের (পিএটিসি) মাধ্যমে কৃষকদের ঔষধি চাষে উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম মনে করেন, চাষের প্রসার বাড়লে এখানকার ঔষধি পণ্য রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৭
এএসআর
**
সিন্ডিকেটে ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত ঔষধি গ্রামের ভেষজচাষিরা
** ঔষধি গ্রামকে আত্মনির্ভরশীল করে গেছেন আফাজ পাগলা
** ভেষজ বিপ্লবে গ্রামের খ্যাতি দেশজুড়ে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।