তবে এই দৃশ্যটি কোনো ফুলবাগানের নয়, সবজি চাল কুমড়া ক্ষেতের দৃশ্য এটি। পাহাড়ি অঞ্চল নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের মৌ গ্রাম, চন্ডিগড়, তেলাচী গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চাষ হয়েছে শীতের সবজি চাল কুমড়া।
অল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি গৃহস্থরাও চাল কুমড়া চাষ করছেন।
চন্ডিগড় ইউনিয়ন পরিষদের চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. আবুল হাশিম। তিনি কয়েক বছর আগে শখের বশে করে লাভবান হওয়ার পর থেকে প্রতিবছরই বাণিজ্যিকভাবে চাল কুমড়া চাষ করছেন। বিগত কয়েক বছর পাঁচ লাখ টাকা করে খাটিয়ে প্রতিবার কম-বেশি ১৫ লাখ টাকার মতো কুমড়া বিক্রি করতে পারছেন প্রতিবার। প্রতি কাঠা জমি চাষ করতে ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এ মৌসুমে নভেম্বরের মাঝামাঝি ৪০ কাঠা জমিতে চাল কুমড়ার চারা রোপণ করেছিলেন তিনি। পরে সেই জমিতে চারাগুলোর ওপরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে মাচা তৈরি করে দেন। চারাগুলো গাছ হয়ে এখন সেই মাচায় উঠছে। ফুলের সঙ্গে কোনো কোনো গাছে চাল কুমড়াও ঝুলছে এখন।
আবুল হাশিম চারা রোপণ করার সময় প্রতি কাঠা জমিতে ৪০ কেজি করে টিএসপি সার ব্যবহার করেছিলেন। পরে গাছে ফুল আসার আগে আরও একবার সার ব্যবহার করা হয়। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়া পোকার আক্রমণ থেকে গাছ ও চাল কুমড়া রক্ষা করতে সপ্তাহে একবার কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় ক্ষেতে। সাড়ে তিন ফুট দূরত্বে রোপণ করা চারার একেকটি সারির দূরত্ব রাখা হয়েছে চার ফুট।
হাশিম বাংলানিউজকে আরো জানান, ৪০ কাঠা জমিতে চাল কুমড়া চাষ করতে সবমিলিয়ে পাঁচ লাখ টাকার মতো খরচ হচ্ছে। চাল কুমড়া ক্ষেতে ৩শ’ টাকা করে পারিশ্রমিকে প্রতিদিন কাজ করছেন ১০ জন কৃষি শ্রমিক। আর/১০ দিনের মধ্যে তারসহ অন্যান্য লোকের ক্ষেত থেকে চাল কুমড়া বিক্রি শুরু হবে।
আর তখন স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে যাবে চন্ডিগড়ের মৌ গ্রামসহ অন্যান্য গ্রামের চাষ করা চাল কুমড়া।
আবুল হাশিম জানান, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান নিয়ে এসে ব্যবসায়ীরা চাল কুমড়া পাইকারি দামে কিনে নিয়ে যাবেন।
তিনি এবার খরচ বাদ দিয়ে অন্তত ১০ লাখ টাকার মতো আয় করবেন বলে আশা করছেন।
শুধু হাশিম নন দুর্গাপুরের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ বাণিজ্যিক চিন্তা ছাড়াও বাড়িঘরের আঙিনায় চাল কুমড়া চাষ করে আর্থিক দিক থেকে হচ্ছেন লাভবান। চন্ডিগড় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে চাল কুমড়া চাষ হয়েছে। এর মধ্যে চন্ডিগড় গ্রামের সুলতান উদ্দিন এবার ৩৫ কাঠা জমিতে চাল কুমড়া চাষ করেছেন, একই ইউনিয়নের তেলাচী গ্রামের মিরাজ আলী করেছেন ২০ কাঠা জমিতে, মৌ গ্রামের রহুল আমিন করেছেন ১৮ কাঠা জমিতে। এছাড়া চন্ডিগড়ের শেষ সীমান্ত ঘেঁষা কলমাকান্দা উপজেলার লেঙ্গুরা ইউনিয়নের সুজন মিয়া এবার ১২০ কাঠা জমিতে চাল কুমড়া চাষ করেছেন।
এদের মধ্যে রহুল আমিন ও মিরাজ আলী এবারই প্রথম চাষ করেছেন।
চাল কুমড়া চাষ করে এখানকার সবাই লাভবান হয়েছেন। তাই লাভবান চাষিদের দেখে অনেকেই ঝুঁকছেন এ সবজি চাষাবাদে। এতে একদিকে সবজির চাহিদা যেমন পূরণ হচ্ছে, ঠিক তেমনি পূরণ হচ্ছে আর্থিক চাহিদাও।
মৌ গ্রামের ইউনুছ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, লাভ পেয়ে গ্রামের মানুষ যেভাবে চাল কুমড়া চাষ শুরু করেছেন তাতে চন্ডিগড় একদিন হয়ে যাবে চাল কুমড়ার ইউনিয়ন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৮
এসআই