ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২, ১২ মে ২০২৫, ১৪ জিলকদ ১৪৪৬

কৃষি

কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে বিপাকে কৃষকেরা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:৫৩, মার্চ ৪, ২০১৮
কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে বিপাকে কৃষকেরা! পাওয়ার টিলার কেনার কিছুদিনের মধ্যেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: অর্থ-শ্রম-সময় বাঁচাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে কৃষি যন্ত্রপাতিতে। এখন আর লাঙল দিয়ে হাল চাষ করেন না কৃষকেরা। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ছোঁয়া সর্বত্র। ধানের রাজ্য নওগাঁ জেলার কৃষিকাজেও লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। 

এ জেলার প্রায় শতভাগ কৃষকেরাই আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন। কিন্তু এসব যন্ত্রপাতি কিনে বিপাকে পড়েছেন তারা।

বিক্রেতারা আগের মতো সুবিধা দিচ্ছেন না। ফলে লাভের বদলে লোকসান গুণতে হচ্ছে কৃষকদের।  

নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার কৃষক সাইফুল কবির ছয় মাস আগে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা ব্যয় করে চায়না সাইফিং কোম্পানির একটি পাওয়ার টিলার কিনেছেন। অথচ এক মৌসুমেই বেহাল অবস্থা এই পাওয়ার টিলারের।

কেনার কিছুদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়েছে পাওয়ার টিলারের যন্ত্রাংশ-ছবি-বাংলানিউজ

কেনার কিছুদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়েছে পাওয়ার টিলারের যন্ত্রাংশ-ছবি-বাংলানিউজ

এরইমধ্যে পাওয়ার টিলারের চেইন, বিয়ারিং, নাইলার, পিস্টন, রিং ও হেডলাইট ভেঙে গেছে। প্রতিটি চেইনের দাম ২৮০ টাকা, বিয়ারিং ১৫০, নাইলার ৪০০, পিস্টন ৪০০, চেইন বক্স ১ হাজার ২শ’, রিং ১২০ ও হেডলাইটের দাম দেড় হাজার টাকা। জমি চাষ করে এক মৌসুমে ৬৫ হাজার টাকা আয় হয়েছে তার। আর ডিজেল ও মেরামত খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। অথচ এসব পাওয়ার টিলারের কোনো ওয়ারেন্টি নেই বলে জানান সাইফুল।
 
তিনি বলেন, ‘পাওয়ার টিলার কিনেই লষ্ট হইয়া গ্যাচে। গিয়ার বক্স ভাগিচচে। চেইন কভার ফাটিচ্চে। কিনেই লষ্ট হচ্ছে। কিনে দেখি ভুল হইয়া গ্যাচে। কোনো ওয়ারেন্টি নাই। ’
 
একই অবস্থা বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার শালুকগাড়ি গ্রামের মমিনুল ইসলামের। ১ লাখ ৫ হাজার টাকা খরচ করে ডংফিং কোম্পানির পাওয়ার টিলার কিনে বিপাকে পড়েছেন তিনি। বছর না ঘুরতেই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কোনো রকমে মেরামত করে জমি চাষ করছেন। কৃষি যন্ত্রপাতির এক মৌসুম বিনামূল্যে মেরামত করে দেওয়া এবং কয়েক বছরের ওয়ারেন্টি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এসব কৃষকরা।

মমিনুল বলেন, ‘পাওয়ার টিলারের বডি হালকা। জমি চাষ করে মজা পাই। কিন্তু বেশিদিন টেকে না। হালকা আঘাতেই ভেঙে যায়। আমাদের এক মৌসুম মেরামত করে দিলে ভালো হয়। এর পাশাপাশি যদি এক বছরের ওয়ারেন্টি দেয় তবে চাষিরা বাঁচবে। ’
 
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার অ্যান্ড মেশিনারি বিভাগের এক তথ্যে দেখা গেছে, দেশে মোট পাওয়ার টিলারের সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখ। প্রতি বছর প্রায় ৬০ হাজার পাওয়ার টিলার আমদানি করা হচ্ছে। পাওয়ার টিলারের বাজারে ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করছে চিটাগাং বিল্ডার্স লিমিটেড। এ বাজারটি গত কয়েক বছর ধরেই ওঠানামার মধ্যে রয়েছে। ২০১১ সালে ৪২০ কোটি টাকার পাওয়ার টিলার বিক্রি হলেও পরের বছরে তা ৪০২ কোটি, ২০১৩ সালে ৩০০ কোটি, ২০১৪ সালে ৪২০ কোটি এবং  ২০১৫ সালে ৪৩৭ কোটি টাকার পাওয়ার টিলার বিক্রি হয়। ২০১৬ সালে ৪২০ কোটি এবং ২০১৭ সালে ৪৫০ কোটি টাকার পাওয়ার টিলার বিক্রি হয়েছে। আর দেশের বাজারে ৭০ শতাংশের বেশি দখল রয়েছে চিটাগাং বিল্ডার্স অ্যান্ড মেশিনারি লিমিটেডের।
 
পাওয়ার টিলারের ওয়ারেন্টি দেওয়া প্রসঙ্গে চিটাগাং বিল্ডার্স অ্যান্ড মেশিনারি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ক্রেতার প্রয়োজনেই ওয়ারেন্টি চেয়ে নিতে হবে। কৃষক ওয়ারেন্ট যদি চাই তবে আমরা দিতে বাধ্য। প্রতিটা পাওয়ার টিলারে ওয়ারেন্টি ক্যাটালগ আছে বলে দাবি করে তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৮
এমআইএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।