আক্রান্ত জেলাগুলোতে এই পোকা দমনে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ পোকা দমন করা না গেলে আম, কাঁঠালসহ অন্যান্য ফল উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকরা।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) একদল গবেষক মিলিবাগ নিয়ে গবেষণা করছেন। তাঁরা জানান, মিলিবাগের আক্রমণে ফলন কম হওয়ার পাশাপাশি গাছও মারা যেতে পারে। এই পোকা বেশি আক্রমণ করে আমগাছে।
গবেষকদলের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, প্রধান আম উৎপাদনকারী জেলা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এখনো মিলিবাগ আক্রমণ করেনি। তবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে এ দুই জেলায়ও ছড়িয়ে পড়তে পারে মিলিবাগ।
গবেষকরা জানিয়েছেন, চলতি বছর চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, জামালপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও লালমনিরহাট জেলায় মিলিবাগ আক্রমণ করেছে। এসব জেলার আম, কাঁঠাল, মাল্টা, পেয়ারা, লিচু, ডালিম, নারকেল, আতা, লেবু, বকুল ও মেহগনি গাছে এই পোকা আক্রমণ করেছে।
গবেষকদলটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, মিলিবাগের জীবনচক্র সম্পন্ন হতে এক বছর লাগে। পূর্ণাঙ্গ স্ত্রী পোকা এপ্রিল মাসে মাটির নিচে আবর্জনার ভেতরে তুলার মতো থলে তৈরি করে তাতে ডিম পাড়ে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে এই ডিম ফুটে নিম্ফ (বাচ্চা) বের হয় এবং খাবারের খোঁজে গাছের কচি অংশে আক্রমণ করে।
এই পোকার জীবনচক্রের তিনটি পর্যায় হচ্ছে ডিম, নিম্ফ ও পূর্ণাঙ্গ পোকা। এর মধ্যে নিম্ফ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। স্ত্রী নিম্ফ সরাসরি গাছের ক্ষতি করে থাকে। নিম্ফ ও পূর্ণাঙ্গ মিলিবাগ গাছের কচি শাখা-প্রশাখা, পাতা ও ফলের বোঁটা থেকে রস চুষে খাওয়ায় এসব অংশসহ পুষ্পমঞ্জরি ও ফল শুকিয়ে ঝরে পড়ে। এতে ফলন ব্যাপকভাবে কমে যায়। আক্রমণ প্রকট হলে গাছটি মারা যায়।
এছাড়া পাতায় মিলিবাগের মধুরস নিঃসরণের ফলে ‘সুটি মোল্ড’ জন্মায়। ‘সুটি মোল্ড’ হলো একটি অসচ্ছ আবরণ যা পাতার সালোকসংশ্লেষণ বন্ধ করে দেয়। ফলে খাদ্য উৎপাদন করতে না পারায় ফলন ব্যাহত হয়।
মিলিবাগ দমনের জন্য এর জীবনচক্রের তিনটি পার্যায়েই সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কীটতত্ত্ববিদরা।
তাঁরা জানান, এপ্রিল মাসে পূর্ণাঙ্গ পোকা গাছ থেকে মাটিতে নেমে আসে। এ সময় গাছের গোড়ায় পলিথিন পেঁচিয়ে ওপরের অংশ খুলে রাখাতে হবে। পোকা জমা হলে সেগুলো পুড়িয়ে কিংবা কেরোসিন মিশিয়ে মাটির এক মিটার গভীরে পুঁতে ফেলতে হবে।
এ ছাড়া ডিম নষ্ট করার জন্য মে-জুন মাসে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে রোদে শুকাতে হবে। নিম্ফের গাছে ওঠা ঠেকাতে মাটি থেকে এক মিটার উঁচুতে গাছে আঁঠালো পদার্থ বা রাবার ব্যান্ড পেঁচিয়ে দিতে হবে। এছাড়া গাছের গোড়ায় নালা তৈরি করে কেরোসিন ব্যবহারে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
কীটনাশক ব্যবহার প্রসঙ্গে গবেষকরা বলেন, এই পোকা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক ব্যবহার করতে চাইলে অবশ্যই নিম্ফ পর্যায়ে প্রয়োগ করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ পোকার দেহ সাদা মোমজাতীয় পদার্থে আবৃত থাকায় কীটনাশক কার্যকর হয় না। একমাত্র পুড়িয়ে বা মাটিতে পুঁতে ফেলার মাধ্যমেই মিলিবাগ পুরোপুরি দমন করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৮
জেএম