জমির মাটি, ফসল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশকের পরিবর্তে ক্ষেতে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহারের প্রতি এখানকার কৃষকদের আগ্রহ অনেকাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পদ্ধতি ব্যবহার বাড়াতে কৃষি বিভাগ কৃষকদের সচেতন করছে।
কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে একদিকে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে কায়িক শ্রমও দিতে হচ্ছে কম। জমিতে পাখির অবস্থান স্থাপনা করে পাখির মাধ্যমে ধানের ক্ষতিকর পোকা নিধনের জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, দুই লাখ ৮৪ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন চাল। কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনোর উদ্দেশে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও পদ্ধতির ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পার্চিং অগ্রগামী। আগে ফসলে পোকা-মাকড় রোধে কীটনাশক ব্যবহার করা হতো। এতে একদিকে যেমন ব্যয়বহুল ছিলো, অন্যদিকে ছিলো ঝুঁকিপূর্ণ।
সূত্র জানায়, জেলায় মোট ৪৯ হাজার ৪৭৩ হেক্টর জমিতে কৃষকরা পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে সিংড়া উপজেলায় ২৯ হাজার ৭১৪ হেক্টর, নলডাঙ্গায় ৬ হাজার ৩৫০ হেক্টর, বড়াইগ্রামে ৪ হাজার ৮০০ হেক্টর, গুরুদাসপুরে ৩ হাজার ৮২০ হেক্টর, নাটোর সদর উপজেলায় ২ হাজার ৮৩৫ হেক্টর, লালপুরে ১ হাজার ২০০ হেক্টর এবং বাগাতিপাড়া উপজেলায় ৭৪০ হেক্টর।
পার্চিং হলো ফসলের জমিতে পাখি বসার ব্যবস্থা করা। ক্ষেতে গাছের শুকনো ডাল বা বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করে পাখি বসার জন্য ফসল থেকে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থান তৈরি করা হয়। এটি সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার একটি উত্তম পরিবেশ বান্ধব যান্ত্রিক কৌশল। সাধারণত ফসলের চেয়ে এক ফুট বেশি উচ্চতায় পাঁচ শতকে একটি করে ডাল বা কঞ্চি পুঁততে হয়। পাখিরা ধানের জমিতে এসব ক্ষতিকর পোকাসহ কীটপতঙ্গ খায়। ফলে মাঠে ক্ষতিকর পোকার সংখ্যা কমে যায় এবং পোকার বংশ বিস্তার রোধ হয়।
পার্চিং পদ্ধতি জনপ্রিয় করতে হালতিবিল, চলনবিলের বিভিন্ন এলাকা, নলডাঙ্গা, সিংড়া, সদর উপজেলাসহ সংশ্লিষ্ট কৃষি এলাকায় কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নিয়ে পার্চিং উৎসব করেছেন এবং পার্চিংয়ের প্রায়োগিক দিক ও উপকারিতা সম্পর্কে অবহিত ও উদ্বুদ্ধ করেছেন।
চলনবিলের বড় সাঁঐল এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, আবাদকারী ইসলাম বরাবরের মতো এবারো দেড় বিঘা বোরো জমিতে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
হালতিবিলের কৃষকরা জানান, এ পদ্ধতিতে অনেক ক্ষতিকর পোকার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এখন পাখির সংখ্যা অনেক কম বলে পুরোপুরি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন কৃষকরা।
নলডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, একটি মাজরা পোকার স্ত্রী মথের পেটে আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ ডিম থাকে। এ পোকা ধান গাছের গোড়ায় কুশি কেটে দেয়, ধানে চিটা হওয়ার কারণও এ পোকা। পাখির প্রিয় খাবার মাজরাসহ অন্যান্য পোকা।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মেহেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, উপজেলায় বোরো ধানের আবাদি জমির ৯৫ শতাংশ পার্চিং সুবিধার আওতায় এসেছে। এতে করে পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশকের অপব্যবহার রোধ হওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবেও তাদের এক মণ ধানের সমপরিমান অর্থের সাশ্রয় হওয়া সম্ভব।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পার্চিংসহ অন্যান্য প্রযুক্তি ও পদ্ধতি কৃষকদের অবহিত এবং উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে বোরো ধান উৎপাদনে সমৃদ্ধি আনার প্রচেষ্টায় নিরলসভাবে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৮
আরবি/