এজন্য স্বাদে, গুণে ও মানে বিখ্যাত আমের চাহিদা মেটাতে জৈব পদ্ধতিতে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সাতক্ষীরার চাষিরা।
গাছে গাছে দুলছে চাষির স্বপ্ন।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় ৪০ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য চার হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পাঁচ হাজার ২৯৯টি বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
আর সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমেও সাতক্ষীরার আম রপ্তানি হবে ইতালি, সুইডেন, ডেনমার্ক, জার্মানি, ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিষমুক্ত আম উৎপাদনে সাতক্ষীরা সদর, দেবহাটা ও কলারোয়া উপজেলার সঙ্গে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে আশাশুনি ও তালা উপজেলা।
এসব উপজেলার বাছাইকৃত পাঁচশ’ চাষিকে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনে দেওয়া হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ। জৈব সার, আর্সেনিকমুক্ত পানি ও মাছি-পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ দিয়েই চলছে বিষমুক্ত আম উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ।
তবে, প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত না হওয়া ও বাড়তি তাপমাত্রার কারণে অনেক বাগানেই আমের গুটি ঝরে পড়ছে। এতে কিছুটা চিন্তিত চাষিরা। যদিও এ পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক মনে করছে কৃষি বিভাগ।
সূত্র আরও জানায়, সাতক্ষীরার মাটি ও আবহাওয়া আম উৎপাদনের জন্য বেশ উপযোগী। এ জেলার আম অন্যান্য জেলার চেয়ে ১৫-২০ দিন আগে পাকে। খেতেও বেশ সুস্বাদু। তাই রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পেছনে ফেলে রপ্তানি বাজারে বিশেষ গুরুত্ব পায় সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর ও আম্রপালি আম।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের আম চাষি লিয়াকত আলী বাংলানিউজকে জানান, তার ১৫ বিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। রপ্তানির লক্ষ্যে তার বাগানে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ও উত্তরণের সহযোগিতায় সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হচ্ছে ল্যাংড়া ও হিমসাগর আম।
তিনি আরও জানান, তার বাগান থেকে গত মৌসুমে চার মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছিল। কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে এ বছরও আম রপ্তানির আশা করছেন তিনি।
এ ব্যাপারে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া ও উত্তরণের সফল প্রকল্পের ফিল্ড অর্গানাইজার মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে জানান, রপ্তানির লক্ষ্যে মৌসুমের শুরুতেই বিষমুক্ত আম উৎপাদনে পাঁচশ’ চাষিকে প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি মৌসুমে আম রপ্তানির জন্য নতুন কয়েকটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে গাছ থেকে আম পাড়া, পচনরোধে হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্যাকেজিংয়ের ওপর চাষিদের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। এসব কাজ সার্বক্ষণিক তদারকি করছে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় সহযোগী সংস্থা ও সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তিনি আরও জানান, রপ্তানির পাশাপাশি রাজধানীর সুপার শপগুলোও সাতক্ষীরার আম নিতে যোগাযোগ শুরু করেছে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে জানান, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ জেলার আমের সুনাম বিদেশেও রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে মে মাসের মাঝামাঝিতে সাতক্ষীরার ল্যাংড়া, হিমসাগর, আম্রপালি ও মল্লিকা রপ্তানি হবে ইউরোপের বাজারে। এ বছর রপ্তানির পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৮
এসআই