ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

কৃষকের স্বপ্ন এখন পানির নিচে

সাইফুর রহমান রানা, ডিভিশনাল স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩২ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৮
কৃষকের স্বপ্ন এখন পানির নিচে কৃষকের জমির ধান পানির নিচে। ছবি: বাংলানিউজ

রংপুর: অসময়ের বর্ষণে পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের শত বিঘা জমির ধান। প্রকৃতির বিমুখতায় ধান কাটার আগ মুহুর্তে জমির ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের মাথায় যেন বাজ পড়েছে।

কয়েকদিন আগেও রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। যতদূর চোখ গিয়েছিল সোনালি আভা ছড়ানো ধানের শীষই চোখে পড়েছিলো।

আরও চোখে পড়েছিলো, আধাপাকা ধানের শীষের সমারোহ। কৃষকের জমির ধান পানির নিচে।                                          ছবি: বাংলানিউজকৃষকরা তখন আশা করেছিলো, অল্প কয়েকদিনের মধ্যে তাদের আধাপাকা ক্ষেতগুলোও ছড়াবে সোনালি আভা। তখন সোনালি স্বপ্নেই বিভোর ছিল কৃষকরা। হঠাৎ অসময়ের বর্ষণ তাদের স্বপ্নগুলো যেন ভেঙে চুরমার করে দিল। তাদের সোনালি স্বপ্ন আজ পানির নিচে নিমজ্জিত।

সরেজমিনে রোববার (মে ০৬) গোটা উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, উঁচু জমি ব্যতিত অপেক্ষাকৃত নিচু, নদী সংলগ্ন কিংবা বিল এলাকার ধান ক্ষেতগুলো পানির নিচে নিমজ্জিত। যদিও কৃষি অফিস দাবি, আমাদের কাছে ফসল তলিয়ে যাওয়ার কোনো খবর নেই। তবুও যদি কিছু জমি পানিতে তলিয়ে যেয়ে থাকে দু-একদিনের মধ্যে সে পানি জমি হতে নেমে যাবে। এতে ফসলের খুব একটা ক্ষতি হবে না।

কথা হয় উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের খামারের ডাঙাগ্রামের কৃষক রিয়াজুল ইসলামের সঙ্গে, তিনি বাংলানিউজকে জানান,খামারের ডাঙ্গার পুঁটিমারী দোলায় আমার জমির ধান আর কয়েকদিন পরেই কাটা যেতো। কিন্তু হঠাৎ বর্ষণে আমার প্রায় ১০ বিঘা জমির ধান সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কবে পানি সরে যাবে এনিয়ে আমি দুঃচিন্তায় আছি।

তিনি আরও জানান, আমার আর কোনো জমি নেই। এখান হতে ফসল না পেলে আমাকে না খেয়ে মরতে হবে। একই এলাকার কৃষক আব্দুর মান্নান ও শাহানুর বাংলানিউজকে জানান, পুঁটিমারী দোলায় প্রায় শত বিঘা জমি(৫২ শতাংশ) পানির নিচে। এছাড়াও গোটা পাথারের ধান এখনও পানিতে গলা পর্যন্ত রয়েছে। যে আবহাওয়া বিরাজ করছে আবারও যদি বর্ষণ হয় তাহলে গোটা পাথারের(বড় এলাকা)ধান আর পাওয়া যাবে না। এ চিন্তায় আমাদের চোখে ঘুম নেই। কৃষকের জমির ধান পানির নিচে।  ছবি: বাংলানিউজকথা হয় লোহানীপাড়া ইউপির বিলপাড়া গ্রামের কৃষক শ্যামল লোহানীর সঙ্গে। তিনি জানান, আমার প্রায় চারবিঘা জমির ধান পানির নিচে। পানি নামছে, তবে ধানের কি অবস্থা হবে তা জানি না।

তিনি আরও জানান, বিল সংলগ্ন শত বিঘা নিচু জমির ধান হঠাৎ বর্ষণে সম্পূর্ণরুপে তলিয়ে যায়। যে হারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে তাতে ধান নিয়ে আমরা শঙ্কার মধ্যে আছি। এখনও ধান কাটতে দিন দশেক দেরি আছে।

উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনক রায় বাংলানিউজকে জানান, গোটা উপজেলায় আমাদের কাছে ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কোনো খবর নেই। তবে হঠাৎ বর্ষণে কিছু নদী ও বিল সংলগ্ন নিচু জমির ফসল তলিয়ে যেতে পারে। পানি দ্রুত নামছে কাজেই ফসলের খুব একটা ক্ষতি হবে না।

বদরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আমি রোববারও উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছি। জমির ধান তলিয়ে গেছে এমন জমি দেখিনি। তবে জমিগুলোতে অনেক পানি জমেছে। এ কারণে ধান কাটতে কৃষকের দেরি হবে।

রংপুর আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলি জানান, দু-একদিনের মধ্যে আবারও বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। যে পরিমাণ বর্ষণ গত কয়েকদিনে হয়েছে আবারও সামনে সে রকম বর্ষণই হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৮
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।