ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

আমের রাজা 'হাড়িভাঙা'

সাইফুর রহমান রানা, ডিভিশনাল স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৫ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৮
আমের রাজা 'হাড়িভাঙা' হাড়িভাঙা আম। ছবি: বাংলানিউজ

রংপুর: কয়েকদিন বাদেই হলদে ও লালচে আভা ছড়ানো রঙ নিয়ে বাজারে আসবে আমের রাজা 'হাড়িভাঙা'। রংপুরের বেকার যুবকদের কাছে 'হাড়িভাঙা’ নামের আম শুধু আম নয়। তারা এখন এই আমকে দারিদ্রতা জয় ও স্বাবলম্বী হওয়ার প্রতীক হিসেবে মনে করেন। এ কারণে এ অঞ্চলে দিন দিন বাড়ছে 'হাড়িভাঙা' জাতের আম বাগান।

বৃহস্পতিবার (২৪ মে) সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন আম বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল বাগানজুড়ে ডালে ডালে ঝুলে আছে ছোট-বড় 'হাড়িভাঙা'  আম। এ আম শুধু আমই নয় এটা হলো আমচাষিদের আগামীর স্বপ্ন।

আগামী দিনের সোনালি স্বপ্নে বিভোর আম চাষিরা। কয়েকদিন পরেই তাদের বাগানের পরিপক্ক পুষ্ট রসালো 'হাড়িভাঙা' আম বাজারে আসবে। বাজারে তাদের আম আসা মানেই আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া।

রংপুর অঞ্চলের কৃষি বিভাগ বলছে, এবার মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলায় ১৫শ ৬০ হেক্টর জমিতে 'হাড়িভাঙা'  আম চাষ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় বিশ হাজার মেট্রিক টন। আম সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্যোগ চলছে বলে কৃষি বিভাগ জানান। গাছে ঝুলে আছে হাড়িভাঙা আম।  ছবি: বাংলানিউজবছর আটেক আগে, বাড়ির সামনের সাড়ে তিন একর জমিতে মাত্র ৩০টি গাছ দিয়ে শুরু হয় মিঠাপুকুর উপজেলার আমচাষি সাহাবুলের আম বাগান। চারা লাগানোর এক বছরের মাথায়, আমের মুকুল আসে তার বাগানে। প্রথমদিকে ফলন সীমিত হলেও বছর বছর বাড়তে থাকে আমের ফলন। সেসঙ্গে বাড়ে সাহাবুলের বাগানের পরিধিও। উর্বর মাটি আর আবহাওয়া অনুকূল থাকলে, প্রতিবছরই ব্যাপক আম আসে তার বাগানে। মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি।

স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় 'হাড়িভাঙা' আমের চাহিদাও রয়েছে বেশ। বছরে আম বিক্রি করে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা আয় করেন সাহাবুল।

সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা আর সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে আরও লাভবান হতে পারতেন তিনি। শুধু সাহাবুল নয়, আশপাশের ৫০টি গ্রামের অনেকেই 'হাড়িভাঙা'  আমের বাগান করেছেন। এসব বাগানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন এলাকার বেকার যুবকরা।

বাংলানিউজের কথা হয় বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউপির ঝাকুয়াপাড়া গ্রামের আম বাগান

মালিক হাসান আল মাহমুদের সঙ্গে।

তিনি জানান, বছর ছয়েক আগে আমি দুই একর জমিতে  'হাড়িভাঙা'  আমের বাগান করি। শুরুতে ফলন কিছুটা কম হলেও পরবর্তীতে আশানুরুপ ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় বর্তমানে আমার ১০ একর জমিতে  'হাড়িভাঙা’র বাগান রয়েছে। আশা করছি কমপক্ষে ৪৫ লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবো। তাকে অনুসরন করে ঝাকুয়াপাড়া গ্রামের অনেকেই এখন 'হাড়িভাঙা'  আমের বাগান করছেন।

তিনি আরও জানান, বেকার যুবকরা অহেতুক তাদের সময় নষ্ট না করে যদি জমি লিজ নিয়ে কিংবা নিজেদের জমিতে  'হাড়িভাঙা'  আমের বাগান করতে পারেন আমার বিশ্বাস তারা একদিন অবশ্যই স্বাবলম্বী হবেন।

 

বদরগঞ্জ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কনক রায় বাংলানিউজকে জানান, উপজেলায় 'হাড়িভাঙা'  আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে  'হাড়িভাঙা' আম রংপুরের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুরের উপ-পরিচালক ড. মো. সরোয়ার জানান, এবার মিঠাপুকুর ও উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলায় ১৫শ ৬০ হেক্টর জমিতে 'হাড়িভাঙা' আমের চাষ হয়েছে। আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন। চাষিরা এখন সফলতার সঙ্গে  'হাড়িভাঙা'  আম চাষ করছেন। আম সংরক্ষণে সরকারি-বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৮
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।