মৌসুমের শেষ সময়ে ধান বিক্রেতাদের প্রতারণার কারণে জেলার কলাপাড়া উপজেলার কৃষকদের চাষের আওতায় একরের পর একর জমিতে আদৌ ফসল না পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই শঙ্কায় রয়েছেন রাঙ্গাবালী উপজেলারও বেশ কিছু কৃষক।
কৃষকরা জানান, চলতি আমন মৌসুমের শুরুতে বীজ ধানের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়। পরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) সঠিক বীজ না দিয়ে বোরো মৌসুমের স্থানীয় নিম্নমানের বীজ সরবারহ করেন ব্যবসায়ীরা। যে বীজের কারণে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীর দুই শতাধিক কৃষকের সর্বনাশ হয়েছে।
কৃষকদের দাবি বিএডিসি’র বস্তায় ওইসব নিম্নমানের বীজ তাদের সরবারহ করা হয়েছে এবং বস্তার ওপরে ধানের জাতের নাম এবং মেয়াদ কাটা-ছেঁড়া করে লেখা ছিল। এসব বীজে সময়ের আগে ধানের শীষ গজিয়েছে, যা অপরিপক্ক বলে কৃষকরা অভিযোগ করেন। এসব ধানে চিটা হওয়ার পাশাপাশি অপুষ্ট ফলনের কারণে ধান হবে কম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএডিসি’র পুরাতন ব্যাগে, ধানের জাত পরিবর্তন করে, মেয়াদ উত্তীর্ণ এসব বীজ প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিক্রি করছেন অনোনুমোদিত খুচরা ব্যবসায়ীরা। সাধারণ কৃষকরা না বুঝেই এসব ধানের বীজ চাষ করে পড়েছেন বিপাকে। অপরিপক্ক অবস্থায় ফলন হয়ে পড়ছে এসব বীজে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কিছু কৃষক ধার দেনা করে পুনরায় চাষ শুরু করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ দরিদ্র কৃষক পুঁজি সংকটে চলতি মৌসুমের চাষ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় শংকায় রয়েছেন।
লুৎফর নামের এক কৃষক জানান, কিছু বীজ বিক্রেতা লাইসেন্স না নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করার পরই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে ফারুক মিয়া নামে অপর কৃষক জানান, সম্প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বীজের কারণে ফলনে ক্ষতির বিষয়টি বুঝতে পারেন। এরপর তারা একত্রিত হয়ে কলাপাড়ায় মানববন্ধনও করেছেন। কিন্তু এসব ঘটার পরও স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার দেখা মেলেনি।
চান মিয়া বেপারী নামে স্থানীয় বীজ ব্যবসায়ী নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছের বলে জানিয়ে সাংবাদিকদের জানান, এ অঞ্চলে হঠাৎ বীজের সংকট দেখা দিলে আমতলী উপজেলার কচুফাতরা এলাকার মো. আবু মিয়ার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করা হয়েছিলো।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষদের সরবারহ করা বীজের প্যাকেটের গায়ে কাটা-ছেঁড়া করে ব্রি-৪৯ লেখা ছিল। কিন্তু ভিতরে ছিল দুই ধরনের বীজ। এসব বীজে খুব দ্রুত ফুল আসে। এ অবস্থায় কিছু ফলন পেতে পারে কৃষক, আবার পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবদুল মন্নান জানান, বীজ সরবারহকারী বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার বিএডিসি’র ডিলার আবু মিয়ার লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কৃষকদের ক্ষতিপূরণে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনা দেয়া হবে পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব কৃষককে রবি মৌসুমে প্রদর্শনী প্লট বরাদ্ধ দেওয়া হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৮
এমএস/এমজেএফ