ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

৯৫ শতাংশ চাষিই সংক্রমিত বীজ আলু ব্যবহার করেন

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৮
৯৫ শতাংশ চাষিই সংক্রমিত বীজ আলু ব্যবহার করেন মাঠে আলু চাষ করছে কৃষক (ফাইল ফটো)

ঢাকা: দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য আলু। বছরে জনপ্রতি আলু কেনা হয় ১০৩ কেজি। বিগত ১২ বছরে আলুর উৎপাদন এবং রফতানি পর্যন্ত বাড়লেও এ শস্যের মান ও ফলন নিয়ে কথা থেকেই যাচ্ছে। আলুর ভালো ফলন না হওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা দুষছেন সংক্রমিত বীজ ব্যবহারকে। তাদের মতে, চাষিদের ৯৫ শতাংশই ব্যবহার করেন সংক্রমিত বীজ আলু, যার ফলে এই শস্যের মান এবং ফলন আশাব্যঞ্জক হচ্ছে না।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আলুর ফলনের ক্ষেত্রে মাত্র ৪ শতাংশ কৃষকের হাতে এই বীজ সরবরাহ করছে সরকার। বেসরকারিখাত থেকে বীজ পান ১ শতাংশ কৃষক।

এসব বীজের সঠিক সংরক্ষণ ও মান নির্ণয়ের সুযোগ থাকে বলে ফলনও হয় বেশ। কিন্তু ৯৫ শতাংশ চাষিই নিজেদের মতো করে সংরক্ষিত বীজ ব্যবহার করেন, যেখানে মান নির্ণয়ের সুযোগ নেই বলে থেকে যায় সংক্রমণ। যে কারণে হয় না ভালো ফলন।

বিএডিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, বেশিরভাগ কৃষকেরই নিম্নমানের বীজ ব্যবহারের কারণে আলুর কাঙ্ক্ষিত ফলন হচ্ছে না। ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশে প্রতি হেক্টরে ১৯-২০ টন আলু উৎপাদন হয়। কিন্তু একই পরিমাণ জমিতে ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৪০-৪২ টন আলু উৎপাদন করে থাকে। এসব দেশে সরকারি উদ্যোগে মানসম্মত বীজ কৃষক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ৯৫ শতাংশ চাষিই ব্যক্তিগত উদ্যোগে বীজ রাখছেন এবং রোপণ করছেন, সেজন্য আলুর ফলনও কম।  

অন্য দেশের সঙ্গে তুলনায় না গেলে অবশ্য বাংলাদেশে আলুর ফলন ক্রমেই বাড়ছে। ২০০৭-২০০৮ অর্থবছরে যেখানে আলু উৎপাদন হয়েছে ৫১ দশমিক ৬৭ লাখ টন। ১০ বছর পরে এসে এ শস্য উৎপাদন ছাড়িয়েছে ১০০ লাখ টন। এরমধ্যে আবার বছরে দুই থেকে আড়াই হাজার টন আলু রফতানিও করা হয়।

বিএডিসির সূত্র মতে, বর্তমানে সারাদেশে প্রতি হেক্টরে দেড় টন হিসেবে মোট সাড়ে ৭ লাখ টন আলু বীজের প্রয়োজন। সরকারের আওতায় রয়েছে ৩০টি আলু বীজ হিমাগার। যেগুলোর মোট ধারণ ক্ষমতা ৪৫ হাজার ৫০০ টন। আলু বীজ সংরক্ষণে তাই সরকার আরও বেশি হিমাগার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।

এ বিষয়ে আলাপ করলে বিএডিসি চেয়ারম্যান ফজলে ওয়াহেদ খোন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা মাত্র ৪ শতাংশ কৃষকের হাতে আলু বীজ তুলে দিয়ে থাকি। বাকি ১ শতাংশ কৃষক বেসরকারি উদ্যোগে চাহিদা মেটান। আমাদের সরবরাহ করা আলু বীজে উৎপাদন ভালো। কারণ আমরা সব ধরনের প্রক্রিয়া মেনেই আলু বীজ সরবরাহ করি। কিন্তু ৯৫ শতাংশ কৃষক নিজ উদ্যোগে আলু বীজ সংগ্রহ করেন বলে এসব বীজের মান ভালো থাকে না। ফলে এসব বীজ থেকে ভালো আলুও হয় না। ’
 
কৃষক পর্যায়ে বেশি হারে আলু বীজ সরবরাহ করতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যতো আলু বীজ সরবরাহ করবো, ততো ভালো উৎপাদন হবে। এ লক্ষ্যে আমরা ছয়টি নতুন হিমাগার নির্মাণ করবো। যার ফলে বিএডিসির হিমাগারে বীজ আলুর সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়বে। ’

বিএডিসির বিশেষজ্ঞরা জানান, আলু বীজ হলো কৃষির মৌলিক উপকরণ এবং ফসল চাষের একমাত্র জীবিত উপকরণ। অন্যান্য উপাদানের কার্যকারিতা বীজের ওপর নির্ভর করে। ভালো মানের বীজ একাই উৎপাদনের ২০ শতাংশ বাড়াতে পারে। সেজন্য বলা যায়, আলুর উৎপাদন বাড়াতে বীজের গুরুত্ব অনেক। আর তাই কৃষকের হাতে উন্নত মানের আলু বীজ পৌঁছালে এ শস্য ফলনে আরও সফলতা আসবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৮
এমআইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।