ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

বোরো আবাদেই পূর্ণ মনোযোগ মাঠের নায়কদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৯
বোরো আবাদেই পূর্ণ মনোযোগ মাঠের নায়কদের বোরো ধান রোপণ করছেন কৃষক। ছবি- অনিক খান

ময়মনসিংহ: কেউ ফসলি জমিতে সেচ দিচ্ছেন, বীজতলা থেকে চারা তুলছেন। কেউবা ভাঙছেন ধানের জালা। আবার কেউ বুনছেন ধানের চারা।

এভাবেই তুমুল ব্যস্ততায় কাটছে মাঠের নায়কদের রোজকার দিন। বোরো আবাদেই সব মনোযোগ তাদের।

 

কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হচ্ছে তাদের। সার, বীজসহ সব ধরনের কৃষি উপকরণ হাতের নাগালে থাকায় দুশ্চিন্তাও নেই। সবার চোখেমুখে একটিই স্বপ্ন মাঠভরা সোনালি ফসল। কৃষকদের কর্মযজ্ঞের এই অপরূপ দৃশ্যটি জেলার প্রতিটি উপজেলার ফসলের মাঠের।  

ধানের চারা রোপণের পর পরিচর্যায় সময় দিতে হবে। আর এটি সম্ভব হলেই কিছুদিন পরে সোনারাঙা পাকা ধান দোল খাবে বাতাসে। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না তাদের।  

দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ শ্যামলিয়ায় ভরপুর জেলার প্রতিটি উপজেলার ক্ষেতের মাঠ। চলতি বছরে বোরো আবাদের পরিমাণ গতবারের চেয়ে খানিকটা কমলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়ে বেশ আশাবাদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।  

ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আমন মৌসুমে ধানের ভালো ফলনের পাশাপাশি আশাতীত দাম পেয়েছে কৃষক। ফলে এবার বোরো মৌসুমের শুরুতেই এই স্বপ্নের ফসল আবাদে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন তারা।  রোপণ করা বোরো ক্ষেত

দায়িত্বশীল একই সূত্র জানিয়েছে, গত বছর ময়মনসিংহ জেলায় বোরো আবাদ হয়েছিল ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৭৮ হেক্টর জমিতে। এবার ১৭ হেক্টর কম জমিতে অর্থাৎ ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬৬১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে গফরগাঁও উপজেলায় ২৩ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে।  

এছাড়া সদর উপজেলায় ১৯ হাজার ৫৮০, হালুয়াঘাটে ২০ হাজার ১৮৫, ধোবাউড়ায় ১২ হাজার ৫২৮, ফুলপুর ২১ হাজার ৩২৫, তারাকান্দায় ২১ হাজার ৮৭১, গৌরীপুর ২০ হাজার ৬৯০, মুক্তাগাছা ১৯ হাজার ৪৬২, ফুলবাড়িয়া ২০ হাজার ৮৬০, ত্রিশাল ১৯ হাজার ৭৩৫, ঈশ্বরগঞ্জ ২০ হাজার ২৫০, নান্দাইল ২১ হাজার ৭৪৫ ও ভালুকা উপজেলায় ১৮ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমি।  

ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল মাজেদ জানান, জমি প্রস্তুতির পাশাপাশি রোপণের কাজ পূর্ণোদ্যমে চলছে। স্থানীয় কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়াসহ পুরো বিষয়টি মনিটরিং করছেন। জেলার কৃষকরা কোনো জমিই পতিত রাখেননি।  

বোরো ফসল নিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা জানান সদর উপজেলার উজান ঘাগড়া এলাকার চাষি কামরুল ইসলাম (৪০)। ২০ শতাংশ জমিতে তিনি বোরো আবাদ করছেন। তার ফসলি জমিতে ইতোমধ্যেই বোরোর চারা রোপণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিন শ্রমিক আলামিন (৩০), লাট মিয়া (২৮) ও হবি মিয়া (৩৫)।  

মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে ফসলের মাঠেই ব্যস্ততার ফাঁকে কথা হয় কামরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, আমনে কাঙ্খিত ফসল ঘরে তুলতে পেরেছি। বোরোতেও সেচের কোনো সমস্যা নেই। জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের পুরোটা সময় বোরো ধান রোপণ করা যায়।  পড়ন্ত বিকেলের বোরো ক্ষেত

বোরো শ্রমিক আলামিন (৩০) জানান, বোরোতে শুধু কৃষকই নয়, শ্রমিকরাও লাভবান হয়। এ সময় কাজের কোনো অভাব থাকে না। প্রতিদিন কৃষকের ক্ষেতে শ্রম দিলে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি মেলে।  

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার জোরবাড়িয়া গ্রামের কৃষক বারেক বেপারী (৪০) এই বছর প্রায় ৪৫ শতাংশ জমিতে বোরো ধান রোপণ করছেন। তিনি জানান, বোরো চাষে আবহাওয়া পুরোপুরি অনুকূলে রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সরবরাহও ভালো থাকায় জমিতে সেচ দিতে সমস্যা হচ্ছে না।  

জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেলো, মাঠে মাঠে কোমর বেধেই বোরো আবাদে নেমে পড়েছেন তারা। ফলে দুপুরে বাড়ি গিয়ে খাবার সময়ও পাচ্ছেন না কৃষকরা। বাড়ি থেকেই খাবার আসছে মাঠে। কাঁদামাখা শরীরে জমির আইলে বসেই আহারে মেতে ওঠছেন মাঠের এই নায়করা।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৮ 
এমএএএম/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।