ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

অভাব তাড়ানোর সংগ্রামে চরের নারীরাও

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯
অভাব তাড়ানোর সংগ্রামে চরের নারীরাও মরিচ আলাদা করছেন চরের নারীরা, ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: যমুনার বাঁধের পাশে নেড়ে দেওয়া মরিচ শুকানো শেষে বাছাইয়ের কাজ করছিলেন চরের নারীরা। ভাল ও মন্দ মরিচগুলো আলাদা করার কাজে তারা ছিলেন ভীষণ মনযোগী। কারণ বাজারে ভাল মরিচের দাম সব সময়ই কমবেশি ভাল। আর মন্দগুলোর দাম একটু কম যায়।

তবে এই কাজটি নারী ছাড়া সাধারণত পুরুষদের দিয়ে করানো হয় না। আর করলেও নারীদের মতো অতটা নিখুঁত হয় না।

এ কারণে বাগান বা ক্ষেত থেকে মরিচ উঠানোর কাজটা নারীরাই করে থাকেন। একইভাবে মরিচ শুকানো ও বাছাইয়ের কাজটিও তারাই করেন। এসব নারীদের বেশির ভাগই স্বামীর কাজে সহযোগী করেন। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি কম হওয়ায় যমুনার বিশাল বুকজুড়ে শোভা পাচ্ছে মাইলের পর মাইল চর। মরিচ আলাদা করছেন  দুই নারী, ছবি: আরিফ জাহানচরের এসব জমিতে নদীর ভাঙনের শিকার মানুষগুলো সামর্থ অনুযায়ী মরিচ চাষ করেছিলেন। চরাঞ্চলে উৎপাদিত সেই খ্যাতির মরিচ নিয়েই বর্তমানে যমুনা বেষ্টিত এলাকাগুলোতে চলছে নারীদের কর্মযজ্ঞতা। এভাবেই চরের নারী-পুরুষ মিলে অভাবে গোচানোর সংগ্রামে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার অনেকই নারী শ্রমিক হিসেবেও কাজ করে থাকেন। তবে মজুরি পেয়ে থাকেন পুরুষের তুলনায় অর্ধেক। কিন্তু চর এলাকায় অন্তত মরিচ ক্ষেত্রে খুব কম সংখ্যক নারীই শ্রমিকের কাজ করেন। তারা সাধারণত স্বামীর কাজেই বেশি সঙ্গ দেন।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় যমুনা বেষ্টিত এলাকাগুলোতে গেলে লাল বাগীচার মতো শুকনো মরিচ নিয়ে চরের নারীদের কর্মযজ্ঞতার এমন চিত্র দেখা যাবে। অবশ্য এ কাজে নারীদের পাশাপাশি কিছু সংখ্যক পুরুষ মানুষেরও দেখা মিলবে বৈকি।

রমিজা বিবি, হালিমা খাতুন, জয়নব বিবি, মর্জিনা বেগম তাদেরই কয়েকজন। অনেকের সঙ্গে একাকার হয়ে শুকাতে দেওয়া মরিচ থেকে ভাল-মন্দ মরিচ আলাদ করার কাজ করছিলেন।

রমিজা বিবি বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবার বর্ষায় যমুনা হিংস্র রূপ নেয়। বসতভিটা কেড়ে নেয়। যমুনার ভাঙনের ফলে জীবনের আয়ু অনেক কমেছে। তবু যমুনাকেই বুকে আঁকড়ে রেখেছি। কারণ যাওয়ার তো কোনো জায়গা নেই। পুরুষ ও নারী শ্রমিকরা কাজ করছেন।  ছবি:আরিফ জাহানতিনি বলেন, স্বামী মফিজ উদ্দিন চরের বেশ কিছু জমিতে মরিচ লাগিয়েছিলেন। মরিচও ভাল হয়েছে। সেই মরিচগুলো বাছাই করছি। চরে উৎপাদিত মরিচসহ রকমারি ফলস চরাঞ্চলের মানুষগুলোর হারানো শক্তি অনেকটাই ফিরিয়ে দিয়েছে। জুগিয়েছে অফুরন্ত সাহস যোগ করেন এই নারী।  

হালিমা খাতুন নামের আরেক নারী বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর অপেক্ষায় বসে থাকি কখন যমুনার পানি নেমে যাবে। স্বামীর সঙ্গে চরের জমিতে মরিচ লাগাতে যাবো। ভাল মরিচ হবে। তা একদিন বড় হবে। গাছ থেকে মরিচ উঠাবো। বাজারে বিক্রি করবো। সংসারের প্রয়োজনে কিছু মরিচ বাড়িতে রেখে দেবো। বাকি মরিচ বাজারে বিক্রি করে সেই টাকায় সংসারের অভাব কিছুটা হলেও দূর হবে।

মরিচ বাছাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে যেন একদমে এতগুলো কথা বলে ফেলেন একাধিকবার যমুনার ভাঙনের শিকার এই নারী। পুরুষ ও নারী শ্রমিকরা কাজ করছেন।  ছবি:আরিফ জাহানজয়নব বিবি বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবছর যমুনার পানি নেমে গেলে মৌসুম ভিত্তিক ফসল চাষে নামেন চরের অভাবী মানুষগুলো। চাষ করেন বিভিন্ন ধরনের ফসল। তবে অন্যতম ফসল হলো খ্যাতির মরিচ। মরিচ উঠানোর পর বাজারে বিক্রি করেন। সামান্য বাড়তি আয়ের জন্য প্রতিটি সংসারে স্বামী-স্ত্রী মিলে এ কাজে শ্রম দেন তারা।

চরের এসব নারীরা বাংলানিউজকে জানান, চরের জমিতে ফসল ফলানোর আসল কাজটি কিন্তু প্রতি পরিবারের স্বামীরাই করে থাকেন। এরমধ্যে সেচ ও জমি প্রস্তুতির বিষয়টি অন্যতম। এছাড়া কীটনাশক ও স্প্রে করার কাজও রয়েছে। সেই কাজগুলো স্বামীরা করে থাকেন। তবে এসব কাজেও স্বামীদের সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেন নারীরা।

মফিজ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, অব্যাহত যমুনার ভাঙনে আজ শত শত পরিবার নিঃস্ব। অভাব-অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করেই টিকে আছেন চরাঞ্চলের মানুষ। তবে প্রত্যেক বছরের এ সময়টাতে আগ্রাসী যমুনা তার বিশাল বুক উজার করে দেয় এসব অভাবী মানুষের জন্য। প্রতিবছর বন্যায় পলি মাটি জমে বালুচরগুলো উর্বর হয়ে পরিণত হয়েছে আবাদি জমিতে। সংসারের অভাব গোচাতে চরের মানুষগুলো স্বামী-স্ত্রী মিলে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করেন সেসব জমিতে।

আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে জানান, চরের মরিচের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। তাই চরের বেশির ভাগ মানুষই মরিচ চাষ করে সংসারের বাড়তি আয়ের চেষ্টা করেন। চেষ্টা করেন অভাবী সংসারের অভাব কিছুটা দূর করার।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৯
এমবিএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।