আর্থিকভাবে সাময়িকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় অনেক কৃষক তাদের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলা উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার খ্যাত চলনবিলের আওতাভুক্ত। এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিই উর্বর পলি মাটি সমৃদ্ধ। এসব জমিতে বছরে দু’টি মৌসুমে ধান, সরিষা, রসুন ও শীতকালীন সবজি ব্যাপকভাবে উৎপাদন হয়। কিন্তু কিছু অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এসব জমির টপ সয়েল কিনে নিচ্ছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি, বহুলী, ছোনগাছা, উল্লাপাড়া উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রঙের বাজার, পুস্তিগাছা, সলঙ্গা, রায়গঞ্জ উপজেলার ধুবিল ইউনিয়নের নইপাড়া, মালতিনগর, ঘুড়কা ইউনিয়নের জঞ্জালীপাড়া, তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ, মাধাইনগর, সগুনা, মাগুড়া বিনোদ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দুই বা তিন ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। বড় বড় ট্রাকে এসব মাটি পরিবহনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটও। নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে এসব রাস্তায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় কিছু মাটি ব্যবসায়ী প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত মাটির ব্যবসা করেন। তারা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির এক থেকে দেড় ফুট মাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে ইটভাটায় বিক্রি করেন। এছাড়া বাড়ি তৈরিতে মাটি ভরাট প্রয়োজন হলেও অনেকে এসব মাটি ব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হন। অল্প সময়েই মাটি ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা রোজগার করেন।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দর রশিদ বলেন, টপ সয়েল জমির প্রাণ। জমির উপরের আট থেকে ১০ ইঞ্চিই হলো টপ সয়েল। আর ওই অংশেই থাকে মূল জৈবশক্তি। কৃষকরা জমির টপ সয়েল বিক্রি করে নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছেন। মাটি বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে তারা জমির উর্বরা শক্তিই বিক্রি করে দিচ্ছেন। জমির এ ক্ষতি ১০ বছরেও পূরণ হবে না।
তিনি আরও বলেন, যেভাবে মাটি বিক্রি হচ্ছে তাতে করে ফসল উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেতে পারে। এসব বিষয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় কৃষক ও মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। তবে বিভিন্ন সময় কৃষকদের টপ সয়েল বিক্রি থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা হয় রায়গঞ্জ উপজেলার ধুবিল ইউনিয়নের নইপাড়া গ্রামের বিদু আলী ও হাসান আলী, সদর উপজেলা পোটল ছোনগাছার শহীদুলসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তারা জানান, জমির উপরের অংশ থেকে দু-এক ফুট পরিমাণ মাটি তারা বিক্রি করছেন। এতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। জমির মাটি কেটে নিলে ফসল আরও ভালো হবে বলেও মনে করেন কৃষকেরা। তারা নিজেদের জমির মাটি আমি বিক্রি করছেন। এতে কারও কিছু করার নেই।
কথা হয়, মাটি ব্যবসায়ী রামকৃষ্ণপর ইউনিয়নের কৈ মাঝুরিয়া গ্রামের আব্দুল করিম, আগরপুর গ্রামের আলমগীর রেজা, জালশুকার ফরিদুল ইসলাম, সদর উপজেলার শাহানগাছার লুৎফর রহমান, সেলিম মেম্বরসহ অনেকের সঙ্গে। তারা জানান, অনেক দিন ধরেই মাটি কেনাবেচার ব্যবসা করছেন তারা। এতে জমির কোনো ক্ষতি হয় না। দীর্ঘদিন ধরে জমিতে পলি পড়ে পড়ে উঁচু হয়ে যায়। ওই উঁচু জমি থেকে মাটি কেটে তারা কৃষকের উপকারই করছেন। এতে কৃষক নগদ টাকাও পায়, জমির ফসলও ভালো হয়।
সলঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, জমির মাটি কে বা কারা বিক্রি করেন তা আমাদের জানা নেই। এসব বিষয়ে আমাদের করারও কিছু নেই।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, অনেকদিন ধরেই জমির টপ সয়েল কাটা হচ্ছে। গত সপ্তাহে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) টপ সয়েল কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। তারপরও গোপনে মাটি বিক্রি করছেন কৃষকেরা। এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯
এসআই