বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নোয়াখালী অঞ্চলের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মহিউদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সয়াবিনের পাতাসহ অন্যান্য অংশ এবং শেকড় অল্প সময়ের মধ্যে পচে-গলে মাটিতে জৈব সার তৈরি করে। এর ফলে মাটির স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অনেক উন্নত হয়।
তিনি আরও বলেন, বাণিজ্যিকভাবে সয়াবিন চাষে আমদানি নির্ভরতা কমানো, জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, দারিদ্র দূরীকরণ ও কর্মসংস্থান বাড়ানো সম্ভব।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মহিউদ্দিন চৌধুরী বিগত কয়েক বছরের তথ্য উপাত্ত গবেষণা ও বিশ্লেষণে জেনেছেন, বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে শস্য পরিক্রমায় রবি ফসল হিসাবে সয়াবিন একক ও অনন্য সাধারণ ফসল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত। সয়াবিন চাষে ঝুঁকি ও খরচ বাদামের তুলনায় অনেক কম, লাভও বেশি। সয়াবিন কাটার পর ওই জমিতে আউশ ধানের ফলন খুব ভালো হয়। সয়াবিন বহুমুখী মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। সয়াবিন মাটিতে নাইট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। প্রতি আবাদ মৌসুমে হেক্টর প্রতি ২৫০ থেকে ২৭৭ কেজি নাইট্রোজেন সংযোজন করতে পারে। যা ফসলের প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেনের শতকরা প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ। সয়াবিন গাছের শেকড়ে ফুলন্ত অবস্থায় ১২-৪৩টি ধূসর বর্ণের গুটি থাকে। এ গুটিগুলোতে বায়োক্যামিকেল প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেন অবমুক্ত করার পর আপনা আপনি শুষ্ক হয়ে শেকড়সহ জৈব পদার্থ হিসেবে মাটিতে মিশে গিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
কৃষি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, যেকোনো ঋতুতেই সয়াবিন চাষ করা যায়। তবে রবি মৌসুমে সয়াবিনের ব্যাপক আবাদ হয়। এর শেকড়গুচ্ছ মাটির এক মিটার নিচে পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে। গাছের কান্ডে ফুল হয়। ফুল সচরাচর সাদা, গোলাপি ও বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। একটি খোসায় বীজ জন্মে। আর এই বীজগুলোকেই সয়াবিন বলা হয়। বীজ রোপণের ৯৫ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। হেক্টর প্রতি ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৫ টন উৎপাদন হয়ে থাকে। সয়াবিন গাছ ৩০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার উঁচু হয়। এর বীজ অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এটি ভোজ্য তেলের প্রধান উৎস।
পরিণত বীজ থেকে শিশুখাদ্য, সয়া-দুধ, দই ও পনির, সয়া-স্যস তৈরি হয়। শুষ্ক বীজে আছে চর্বি, শর্করা ও প্রোটিন। গ্লিসারিন, রং, সাবান, প্লাস্টিক, মুদ্রণের কালি ইত্যাদি দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও সয়াবিন একটি অপরিহার্য উপাদান। কাঁচা সয়াবিন গাছ গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার্য। সয়াবিনের উচ্চ পুষ্টিগুণসহ নানান ব্যবহারে সয়াবিনের আবাদ দিন দিন বেড়েই চলছে।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ি লক্ষ্মীপুর অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ।
এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ৬ হাজর ৫৬০ হেক্টর, রায়পুরে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর, রামগঞ্জে ৮৫ হেক্টর, রামগতি ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে ১৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর। চলতি মৌসুমে সয়াবিনের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
এসআর/এএটি