এবার আবহাওয়া ছিল অনুকূলে, আক্রমণ করেনি পোকা মাকড়। যে কারণে চলতি মৌসুমে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের উর্বর মাটিতে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়ে আসছে। দেশের প্রায় ৮০ ভাগ সয়াবিন এ জেলা থেকে উৎপাদিত। ব্যাপকভাবে এ ফসলের আবাদ ও বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষ্মীপুর ‘সয়াবিনের রাজধানী’ খ্যাতি পেয়েছে। এখানকার শতভাগ কৃষক সয়াবিন আবাদে জড়িত। চলতি মৌমুমে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
চরাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ মাঠে এখন সয়াবিন ফসল। যেদিকে চোখ যায় কেবল সয়াবিন আর সয়াবিন। কাঙ্খিত ফলন হওয়ায় এখন কৃষকের মুখে হাসি।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, সয়াবিন আবাদে খরচ কম। রোগ ও পোকার আক্রমণও কম হয়। চাষাবাদ পদ্ধতি সহজ। ধানের চেয়ে বেশিও দাম পাওয়া যায়। বিক্রি করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। যে কারণে কৃষকরা সয়াবিন চাষে আগ্রহী।
জমির মালিক ও বর্গাচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে চরাঞ্চলে অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অনাবাদি জমি পড়ে থাকতে দেখা যায় না। পড়ে থাকা ওইসব জমিতেও সয়াবিন চাষে সাফল্য আসছে।
হাজিরহাট ইউনিয়নের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিক উল্লাহ মুরাদ বাংলানিউজকে বলেন, সয়াবিন বছরের সব সময় চাষ করা যায়। তবে রবি মৌসুমে ফলন বেশি হয়। যে কারণে রবি মৌসুমে সয়াবিনের আবাদ হয়ে থাকে। ৯৫ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। হেক্টর প্রতি ১.৫ থেকে ২.৫ টন উৎপাদন হয়ে থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামার বাড়ি লক্ষ্মীপুর অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৫ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কৃষি বিভাগ। এরমধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ৬ হাজর ৫৬০ হেক্টর, রায়পুরে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর, রামগঞ্জে ৮৫ হেক্টর, রামগতি ১৮ হাজার ১৯০ হেক্টর ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে ১৪ হাজার ৫৫০ হেক্টর।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক বেলাল হোসেন খান বলেন, আবাহাওয়া অনুকূলে থাকায় লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না এলে কৃষকদের প্রত্যাশা পূরণ হবে। কাঙ্খিত ফলন পেতে কৃষি অফিস ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের নিয়ে কাজ করছেন।
সয়াবিন তেল জাতীয় শস্য। গাছ ৩০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার উঁচু হয়। গাছের কাণ্ডে ফুল হয়। ফুল থেকে শিমের মত চড়াতে বীজ জন্মে, এ বীজ গুলোকেই সয়াবিন বলা হয়। সয়াবিন ভোজ্য তেলের প্রধান উৎস। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। কচি ও শুকনো সয়াবিন বীজ সবজি-ডাল হিসেবে খাওয়া হয়। পরিণত সয়াবিন বীজ থেকে শিশুখাদ্য, সয়া দুধ, দই ও পনির, বিস্কুট ও কেকসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার তৈরি হয়ে থাকে। এছাড়াও পোল্ট্রি ও ফিস ফিড তৈরি, রং, সাবান এবং প্লাস্টিক মুদ্রণের কালি ইত্যাদি দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ও সয়াবিন একটি অপরিহার্য উপাদান।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
এসআর/এসএইচ