আহসান-উল-হক বাবু এলাকায় কৃষি গবেষক হিসেবে পরিচিত। চলিত ভুট্টা মৌসুমে তিনি তার নিজস্ব গবেষণা প্লটে এ গাঢ় জাম রংয়ের ভুট্টা চাষ করেন।
কৃষক আহসান-উল-হক বাবু বাংলানিউজকে বলেন, প্রাচীন এই রঙিন জাতের ভুট্টা উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং খেতে রাজশাহীর বিখ্যাত পাকা ফজলি আমের সমতুল্য। রঙিন ভুট্টার মিষ্টতা (BRIX)-২০ অপরদিকে পাকা ফজলি আমের মিষ্টতা-১৯।
তিনি বলেন, হাজার বছর ধরে পেরুর নৃগোষ্ঠিরা এই রঙিন ভুট্টা মুখরোচক খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতো। এছাড়া রঙিন ভুট্টা প্রাচীনকাল থেকে Incan (ইনকান) সভ্যতার নৃগোষ্ঠিরা রঙিন ভুট্টার রস বেভারেজ (পানীয়) হিসেবে ব্যবহার আসছে।
জানা যায়, রঙিন ভুট্টা ব্লু-বেরির (Bluberres) চেয়েও এই রঙিন ভুট্টা ৫-১০ গুন বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidants) সমৃদ্ধ যা ডালিমের দানার মত কাঁচাও খাওয়া যায়।
বাবু বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে তিনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে রঙিন ভুট্টা সম্পর্কে অবগত হন। পরবর্তীতে সেখান থেকে রঙিন ভুট্টা বীজ বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের ই-মেইল ঠিকানা সংগ্রহ করেন। এরপর আমেরিকায় অবস্থানরত তার নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে আটটি রঙের ১০টি করে রঙিন ভুট্টা বীজ সংগ্রহ করেন।
এরপর বীজ চারা করার জন্য একটি টবে একটি করে বীজ বপন করেন। টবের গভীরতা হচ্ছে দেড় ইঞ্চি এবং চওড়ায় এক ইঞ্চি। এরপর ১২ দিন বয়সী ভুট্টার চারা ‘রেইজড বেড ফারো অ্যান্ড টুইন প্লাটেশন’ পদ্ধতিতে জমিতে রোপণ করা হয়। গত বছরের ২২ নভেম্বর রোপিত প্রতিটি চারা থেকে ৩-৪টি কার্যকরী কুঁশি বের হয়। প্রতিটি কুঁশি থেকে ১-২টি কার্যকরী ভুট্টার মোচা বের হয়। আর প্রতিটি ভুট্টা গাছেই ৩-৪টি ভুট্টার মোচা হয়। সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে এ ভুট্টা চাষে ব্যবহার করা হয়েছে বায়োগ্যাস, কেঁচো সার, হাড়ের গুঁড়া, শিংয়ের গুঁড়া, কোকো কয়ার ও সামান্য পরিমাণে ডিএপি, এমওপি এবং ইউরিয়া সার। কীটনাশক হিসেবে মেহগনি ও নিমতেল ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে রঙিন ভুট্টা চাষের অর্গানিক প্লটে মোটেও আর্মি ওয়ার্ম পোকার কোনো আক্রমণ দেখা যায়নি।
গবেষক কৃষক বাবু বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উন্নত জাতের গম চাষ করছি। এরমধ্যে- রয়েছে প্রায় ৩-৪ হাজার বছর আগের দৃষ্টিনন্দন ‘খোরাসান’ জাতের গমও। এছাড়াও বিলুপ্তপ্রায় কাঠারিভোগ, বালাম, কালোজিরা, রাঁধুনিপাগল, কালাভাত (চাল খয়েরী রং) প্রভৃতি জাতের ধান সংগ্রহ করে চাষাবাদ অব্যাহত রেখেছি।
আমার লক্ষ্য এসব বিলুপ্তপ্রায় জাতের গম, ভুট্টা ও ধান অর্গানিকভাবে চাষাবাদের মধ্য দিয়ে গবেষণা কার্যক্রম এবং চাষাবাদ দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। আর আমার এসব কার্যাবলী জাতীয় পুষ্টি নীতিমালা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জিং হিসেবে সামান্য হলেও ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাবাদী।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বাসুদেব দাস বাংলানিউজকে বলেন, আমার কৃষি ব্লকে ওই রঙিন ভুট্টা আবাদ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগে আমি দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত রয়েছি। দেশের নানা জায়গায় কাজ করারও সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু চাকরি জীবনে এ রঙিন ভুট্টার চাষ কোথাও আমার চোখে পড়েনি। রঙিন ভুট্টা নরম অবস্থায় খেতে প্রচলিত ভুট্টার চেয়ে বেশ মিষ্টি। এ ধরনের বিলুপ্তপ্রায় জাতের ভুট্টা সংগ্রহ করে চাষের জন্য এলাকার কৃষি উদ্যোক্তা আহসান-উল-হক বাবু প্রশংসার দাবিদার।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৯
এনটি