ভবনের সামনে ভাঙা টিন, কাঠসহ বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে। ভবনের দেয়ালে বড় বড় ফাটল ও স্যাঁতসেঁতে অবস্থা।
তার ঠিক পাশেই সবুজ রংয়ের ভাঙাচুরা দু’টি কাঠের দরজা। একটি দরজা খোলা ও অপরটি তালা বদ্ধ। অবশ্য ওই দরজায় তালা থাকা আর না থাকা সমান কথা। হেঁটে ভবনটির সামনে যেতেই চোখ পড়ল খোলা দরজার ভেতরে টেবিল-চেয়ার নিয়ে কেউ একজন বসে আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ষাটের দশকে কৃষকদের হাতের নাগালে সার ও বীজ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কৃষি বিভাগের নিজস্ব অর্থায়নে ৬ শতক জমির ওপর নির্মিত হয় বলইবুনিয়া বীজাগার। তারপর থেকে এখানে একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু ভবনটি নির্মাণের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। ফলে বীজাগারটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
৫-৬ বছর ধরে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হলেও প্রয়োজনের তাগিদে ভবনটি ব্যবহৃত হচ্ছে প্রতিনিয়তই। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বলইবুনিয়া ব্লকের জন্য পাঠানো সার, বীজসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয় এখান থেকেই।
নিজের পরিচয় দিয়ে এখানে একা বসে কি করছেন জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বিস্তারিত বলতে শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘আমার নাম মিজানুর রহমান, আমি মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগের বলইবুনিয়া ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা। এ ব্লকের কৃষকদের কৃষি পরামর্শ দেই। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৮-৯টা পর্যন্ত এখানে থাকি। চাষিরা আসেন বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দেই। এছাড়া উপজেলা থেকে সার, বীজসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ আসলে সেগুলো এখানে সংরক্ষণ করি এবং সময়মত বিতরণ করি। ’
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অফিস করার বিষয়ে এ কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘দরজা ভাঙা, ছাদের পলেস্তারা খসে পরেছে, জীর্ণশীর্ণ আলমিরা, সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে ভেসে যায়। দুই বছর হলো এখানে এসেছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে সেবা ও চাকরি রক্ষার্থে প্রতিদিন এখানে এসে কাজ করছি। বীজাগারের জরাজীর্ণ ভবনের সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন সময়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়ানি। ’
সেবা নিতে আসা কৃষক সুবাশ মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, ধান ও সবজির কোনো সমস্যা হলে মিজান ভাইয়ের কাছে আসি। কিন্তু তার কক্ষে ঢুকে কথা বলার সময় আতঙ্কে থাকি, কখন পলেস্তারা ভেঙে মাথায় পড়ে।
কৃষক আজিজুর রহমান ও শাহ আলম খান বাংলানিউজকে বলেন, মিজান স্যার আমাদের কৃষি বিষয়ক অনেক পরামর্শ দেন। এখান থেকে সার ও বীজও দেওয়া হয়। কিন্তু প্রয়োজনের সময় ভবনের ভেতরে যেতে আমাদের অনেক ভয় লাগে। ভবনটি সংস্কার হলে কৃষকরা উপকৃত হবেন।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হাসান পলাশ বাংলানিউজকে বলেন, ষাটের দশকে কৃষকদের হাতের নাগালে সার ও বীজ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নির্মিত বলইবুনিয়া বীজাগারটি সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বর্তমান কৃষি বান্ধব সরকার আমাদের কাছে এ ধরণের বীজাগারের তথ্য চেয়েছে। আমরা চাহিদা মতো জমির অবস্থান, পরিমাণ ও বর্তমান অবস্থা জানিয়েছি।
তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানে এখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। যেখানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক অবস্থান করবেন এবং কৃষকদের প্রয়োজনীয় সেবা দেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৯
জিপি