ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

দিনাজপুরে বোরো ধান যেন কৃষকের গলার কাটা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৪ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৯
দিনাজপুরে বোরো ধান যেন কৃষকের গলার কাটা বস্তায় ভরা হচ্ছে বোরো ধান। ছবি বাংলানিউজ

দিনাজপুর: দেশে ধানের জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরে এবারে বোরো ধান গলার কাটায় পরিণত হয়েছে কৃষকদের। প্রতি মণ ধান বাজারে বিক্রি করে কৃষকরা লোকসান গুনছেন ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। বাজারে দামের নিম্নমুখিতার কারণে কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে দারুণ হুমকির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। তবে সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান দিতে পারলে মণ প্রতি লাভ হবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। চলতি বোরো মৌসুমে দিনাজপুরে ধান কেনা হবে মাত্র ৫ হাজার ৪৮ মেট্রিক টন। যা জেলার মোট উৎপাদনের শতকরা ১ ভাগেরও কম। 

কৃষক ও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর সরকারের হিসাব মতে প্রতি কেজি বোরো ধানের উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ১৮ টাকা। যদিও বাস্তবে উৎপাদন ব্যয় কেজি প্রতি ২০ টাকা।

কেননা ১ বিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে সাত থেকে আট হাজার টাকা। সেই সঙ্গে ধান মাড়াইয়ের জন্য মজুরি গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত এক থেকে দেড় হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এবার ৪০ কেজি মোটা ধানের জন্য উৎপাদন ব্যয় ৭৪০ টাকা হলেও বাজারে তা ৫০০ টাকায় কৃষকদের বিক্রি করতে হচ্ছে। কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। আর চিকন বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা ৪০ কেজি দরে। এখানেও লোকসানের হার ১৯০ থেকে ২০০ টাকা।  

চিরিরবন্দর উপজেলার কুতুবডাঙ্গার কৃষক শাহ রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে এবার এক বিঘা ধান কাটতে ব্যয় করতে হচ্ছে আট হাজার টাকা। এছাড়াও মাড়াইয়ের জন্য রয়েছে আরও বাড়তি টাকা। অথচ ধানের দাম নেই। সরকার পর্যাপ্ত ধান ক্রয় না করায় কৃষকদের গুনতে হবে বড় আর্থিক ক্ষতি।  

তিনি বলেন, কৃষকদের বাঁচাতে সরকারকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। বোরো ধান যেন কৃষকের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে ধান উৎপাদন থেকে সরে আসবে কৃষক।
 
ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষক সেলিম আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বোরো ধানের যে অবস্থা তাতে করে ভবিষ্যতে ধান আবাদ করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। কেননা উৎপাদন করেও যদি ন্যায্যমূল্য পাওয়া না যায় তাহলে কৃষক কি জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান উৎপাদন করবে।  

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তৌহিদুল ইকবাল বাংলানিউজকে জানান, জেলার ১৩টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭১ হেক্টরে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হলেও আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ২২০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার চাইতে যা ২৫০ হেক্টর বেশি।  

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ধানের ফলন ছিল সন্তোষজনক। জেলায় এবার ফলন হচ্ছে ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬৫ মেট্রিক টন বোরো ধান।  

দিনাজপুরের জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আশ্রাফুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, সরকার এবার ২৬ টাকায় কেজি দরে চাল কিনছেন। দিনাজপুরে কেনা হবে মাত্র ৫ হাজার ৪৮ মেট্রিক টন বোরো ধান। অথচ ১৩ উপজেলায় ধানের উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৬৪ মেট্রিক টন। সরকার মিলারদের কাছ থেকে চাল কিনবেন ৯৩ হাজার ৮৩১ মেট্রিক টন। খোলা বাজার থেকে কম দামে ধান কেনা শুরু করেছেন জেলার ২ হাজার ৪৭৯টি মিলের মালিকেরা। সরকার এবার সিদ্ধ চালের প্রতি কেজি ৩৬ টাকা ও আতপ চালের দর কেজি প্রতি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করেছে।  

দিনাজপুর সদর উপজেলার বড়ইল গ্রামের অটোমিল মালিক রজত বসাক বাংলানিউজকে বলেন, জেলার হাটেবাজারে এখন ধানের দাম খুবই কম। ৭৫ কেজির ওজনের মোটা ধানের বস্তা কেনা হচ্ছে ৮০০ টাকা। যার প্রতি কেজির মূল্য ১০ টাকা ৬৬ পয়সা। আর একই ওজনের চিকন ধান কেনা হচ্ছে প্রতি বস্তা ১ হাজার টাকায়। যার কেজি প্রতি মূল্য দাড়াচ্ছে ১৩ টাকা ৩৩ পয়সা। প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ১৮ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। তাই কৃষকদের এবার আর্থিকভাবে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া ছাড়া উপায় নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৪ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৯
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।