ব্রি-২৮ জাতের প্রতি মণ ধান বর্তমান বাজারে ৫৮০-৬২০ টাকা ধরে কেনাবেচা হচ্ছে। সর্বোচ্চ প্রতি মণ ৬২০ টাকা ধরে হিসেব কষলে উৎপাদন অনুসারে এক বিঘা জমি থেকে ১২ হাজার ৪শ’ টাকার ধান বিক্রি করা যায়।
এভাবে এই জাতের এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করলে সবমিলে একেকজন কৃষকের পকেটে উঠবে ১৩ হাজার ৪শ’ টাকা। অথচ কৃষক রমজান আলীর দেওয়া হিসেবে অনুযায়ী ১ বিঘা জমির বিপরীতে মোট উৎপাদন ব্যয়ের পরিমাণ ১৫ হাজার ৯শ’ টাকা। সঙ্গে জমি বর্গা বাবদ ব্যয় ধরলে বিঘা প্রতি সর্বমোট উৎপাদন খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ হাজার ৯শ’ টাকা। বর্গা বাবদ ব্যয় ছাড়াই এ হিসেবে প্রতিবিঘা জমির ধানের বিপরীতে আড়াই হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে একেকজন কৃষককে। তবে জাত ভেদে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী অন্য ধানের ক্ষেত্রে লোকসানের হিসেব কিছুটা হেরফের হতে পারে বলেও মত দেন এই কৃষক।
ধানের দাম তুলনামূলক কম থাকায় উৎপাদিত বোরো ধানে লোকসানের কথা স্বীকার করলেও তবে কৃষকের দেওয়া হিসেব মানতে নারাজ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সংশ্লিষ্টরা। তাদের ভাষ্য, এক বিঘা জমির বিপরীতে একেকজন কৃষকের সর্বোচ্চ সাড়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়। এছাড়া ধানের ফলনও এবার অনেক ভালো। তাই লোকসানের পরিমাণ অনেকটা কম হবে।
লোকসানের ব্যাপারে কৃষি বিভাগের তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত করে সাদেকুল ইসলাম নামের এক কৃষক বাংলানিউজকে বলেন, খরচ তালিকা কাটছাট করে বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলা অবধি প্রতি বিঘা জমির বিপরীতে এবার একেকজন কৃষককে সর্বনিম্ন ওই পরিমাণ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। এমনকি অনেক কৃষকের বিঘা প্রতি ১৭ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎপাদন ব্যয় হয়েছে। তাই অফিসে বসে হিসেব করলে ব্যয়ের আসল তথ্য মিলবে না। মাঠে এসে কৃষকের কাছ থেকে ব্যয়ের হিসেব জানলে তবেই সঠিক লোকসানের তথ্য তারা বলতে পারবেন।
একনজরে উৎপাদন ব্যয়
উপকরণ:
১। বীজ/চারা ২০০ টাকা
২। ইউরিয়া সার ৭০০ টাকা
৩। ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ৪৬০ টাকা
৪। মিউরেট অফ পটাশ (এমওপি) ৩০০ টাকা
৫। দস্তা সার ৫৫০ টাকা
৬। জিপসাম ১৪০ টাকা
৭। গোবর সার ৩০০ টাকা
৮। কীটনাশক/রোগনাশক ১২০০ টাকা
৯। সেচ ২৫০০ টাকা
১০। উপকরণ বাবদ মোট খরচ (প্রতিবিঘা) ৬৩৫০ টাকা
শ্রমিক (নিজ শ্রমসহ):
১। বীজতলা তৈরি ২৫০ টাকা
২। জমি তৈরী মইসেচসহ ১৩০০ টাকা
৩। বীজ/চারা রোপন ১২০০ টাকা
৪। সার প্রয়োগ ৩০০ টাকা
৫। নিড়ানি ১২০০ টাকা
৬। পানি ব্যবস্থাপনা ২০০ টাকা
৭। বালাইনাশক ১০০ টাকা
৮। শস্য কর্তন ও পরিবহন ৩০০০ টাকা
৯। মাড়াই ও শুকানো ২০০০ টাকা
১০। শ্রমিক বাবদ মোট খরচ (প্রতিবিঘা) ৯৫৫০ টাকা
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ১২ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে এবার ১ লাখ ৮৮ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে ধান লাগানো হয়েছে। এর মধ্যে ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-৫৮, ৮১, কাটারিভোগ, জিরাশাইল, সুবললতা, কাজললতা, মিনিকেট, হিরা মামুনসহ হাইব্রিড জাত অন্যতম। এবার জেলায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪০ মেট্রিকটন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৩১০ হেক্টর জমির ধান। এরমধ্যে সাত হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি ক্ষতি হয়েছে। রোগবালাইয়ের আক্রমণে ১৭ হেক্টর জমির ধান চিটায় পরিণত হয়।
কৃষক শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, একে তো ধান বিক্রি করতে গেলেই লোকসান গুণতে হচ্ছে। এদিকে আবার চাহিদা ধান কাটার শ্রমিক মিলছে না। এক বিঘা জমির ধান কাটতে তাদের ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। সঙ্গে তিন বেলা খাবার ও থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হয়।
এসব কৃষকরা বলেন, এতো কষ্টের ফসল বাজারে নিয়ে লোকসানে বিক্রি করতে বুক ফেটে যায়। ধানের দরপতন অব্যাহত থাকলে অনেক কৃষককেই পথে বসতে হবে বলে জানান তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক বাবলু সূত্রধর লোকসানের কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে জানান, সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। দ্রুত বাজারে এর প্রভাবে পড়বে। এতে ধানের বাজার অল্প সময়ের মধ্যেই বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৯
এমবিএইচ/এমজেএফ