তাদের দাবি, মেহেরপুরে একটি হিমাগার স্থাপন করা হলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত মৌসুমি সবজি সেখানে রাখতে পারবেন। এতে তারা এসব পণ্যের ন্যায্য মূল্য যেমন পাবেন তেমনি বিপুল পরিমাণ সবজি নষ্ট হওয়ার হাত থেকেও রক্ষা পাবে।
জেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্যমতে, এবার মেহেরপুরে প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে মৌসুমী সবজির চাষ হয়েছে। আর গত শীত মৌসুমে চাষ হয় চার হাজার হেক্টর জমিতে। তবে শীত মৌসুমের সবজিও এখন ফলছে মেহেরপুরে।
ফসলের মাঠজুড়ে এখন ফুলকপি, বাঁধাকপি, করলা, বরবটি, পটল, পুঁইশাক, লালশাক, লাউ, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, ঢেঁড়স, ধুন্দল, কচু ও শশাসহ বিভিন্ন সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ এখানে কোনো মোকাম না থাকায় পাইকারিভাবে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারছেন এসব সবজি। নেই কোনো হিমাগারও; যেখানে এসব সবজি সংরক্ষণ করে রাখা যাবে। তাই বাধ্য হয়ে ‘পানির দরে’ বিক্রি করতে হচ্ছে এসব উৎপাদিত ফসল। কখনো কখনো তা পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কৃষক তহসিন আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের গ্রামের প্রায় সবাই সবজি চাষ করেন। প্রতিদিনই এখান থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক ট্রাক সবজি নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। বাকিগুলো পচে নষ্ট হচ্ছে। কোনো হিমাগার নেই যে এগুলো সংরক্ষণ করবে।
তিনি বলেন, স্থানীয় বেপারীরা কম দামে কৃষকের কাছ থেকে কিনে ট্রাকে করে দেশের অন্যান্য এলাকায় নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। তবে এতে কৃষক লাভবান হচ্ছে না। কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়নে স্থানীয়ভাবে এখানে একটি হিমাগার স্থাপন করা জরুরি।
স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, মেহেরপুরে ১২ মাসই কোনো না কোনো সবজি চাষ হয়। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া থেকে শুরু করে ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবহরাহ করা হয়।
আর এসব সবজি ফলনে বিষমুক্ত চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তবে জেলায় উৎপাদিত সবজির জন্য এখন পর্যন্ত কোনো সবজি হিমাগার বা কৃষি মার্কেট গড়ে ওঠেনি। তাই প্রায় প্রতি মৌসুমেই এসব সবজি হয়ে যায় কৃষকের গলার ফাঁস।
সীমান্তবর্তী কাজীপুর গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম ও সাহান আলী বাংলানিউজকে বলেন, ১২ মাসই আমরা প্রচুর সবজি উৎপাদন করি। এখানে সিজনের সময় হাজার হাজার টন সবজি পচে নষ্ট হয়। তাই সবজি হিমাগার গড়ে উঠলে সবজিগুলো যেমনি নষ্টের হাত থেকে বাঁচানো যেতো, তেমনি আমরাও ন্যায্য মূল্য পেতাম।
তাই সরকারের কাছে মেহেরপুরে একটি সবজি হিমাগার স্থাপনের দাবি জানান এ দুই কৃষক।
সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, সাহারবাটিতে একটি হিমাগার স্থাপন করা হলে কৃষকরা সুবিধা পাবেন। তারা সবজি উৎপাদনে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবেন। এ ব্যাপারে আমি স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে বহুবার আবেদন জানিয়েছি।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম শাহাবুদ্দীন বলেন, জেলার সবজি বাংলাদেশে এখন সুপরিচিত। সারা বছরই এখানে বিভিন্ন সবজির চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে বিষমুক্ত এই সবজি।
তার মতে, এখানে একটি সবজি হিমাগার তৈরি হলে কৃষকেরা যেমন তাদের উৎপাদিত ফসল নষ্টের হাত থেকে বাঁচাতে পারবেন, তেমনি তারা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্যও পাবেন।
এ বিষয়ে মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. সাহিদুজ্জামান খোকন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব। কৃষকের উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে এ জেলায়ও অচিরেই একটি সবজি হিমাগার স্থাপন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৩ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৯
এসএ/এমএ